কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশি পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করে ভারত বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়নি বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আগামী ২৬ জানুয়ারি বিশাখাপত্তমে এক সম্মেলনে যোগ দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি ভারতের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাবেন। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের জনগণকে আশ্রয় দিয়েছে। অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। কিন্তু এভাবে বাংলাদেশি পণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি। ভারত বাংলাদেশকে তামাক ও মদ ছাড়া সকল পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। আবার কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি আরোপ করেছে। এর অর্থ বাংলাদেশি পণ্য পুরোপুরি শুল্কমুক্তভাবে যায় না। এটা বন্ধুত্বের পরিচয় নয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এরই মধ্যে ভারতে কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ ও ভারতীয় পণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের পরামর্শ এসেছে। ভারত থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। তুলা, সুতা ইত্যাদি পণ্যে দেশটির ওপর নির্ভরশীলতাও আছে। সব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ৫ জানুয়ারি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ বাংলাদেশের পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে গেজেট প্রকাশ করে। এর ফলে ভারতের বাজারে পাট, সুতা, চট ও বস্তা রফতানি করতে বাংলাদেশের রফতানিকারককে প্রতি টনে ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার শুল্ক দিতে হবে। পাটজাত পণ্য রফতানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারতে প্রায় ২ লাখ টন পাটের সুতা, চট ও বস্তা রফতানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রফতানিকারকরা মনে করেন ভারতের এই সিদ্ধান্তে পাটপণ্য থেকে রফতানি আয় কমে যাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান পাটপণ্যে ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে দেশে পাট শিল্পে প্রণোদনা দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, পাট একটি সম্ভাবনাময় খাত। পাট থেকে কাগজের পাল্প তৈরির সুযোগ রয়েছে। কাশেম খান বলেন, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ইকোনমিক জোনে সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। হালাল সনদ দেওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা চেম্বারের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ চান তিনি। ঢাকা চেম্বারের অন্য পরিচালকরা বলেন, বিদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি হওয়ায় স্থানীয় তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকার শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে প্রণোদনা দেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছে। নতুন নতুন অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তবে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে এখন না হোক ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরুল ইসলাম, সহসভাপতি হোসেইন এ সিকদারসহ অন্যান্য পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
সুত্রঃ সমকাল / কৃপ্র/এম ইসলাম