সুইজারল্যান্ডের দাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তি অনুসমর্থন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো, কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করা। এক্ষেত্রে চাপ সহনশীল জাত উন্নতকরণ ও উদ্ভাবন, পানি সহিষ্ণু ধান উত্পাদন, সৌর বিদ্যুত্ ভিত্তিক সেচ পাম্প চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন, শস্য, কৃষি, সম্পদ রক্ষায় সমাধান খুঁজতে গবেষণা ও বিশ্ব বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন অলাভজনক মডেল উদ্ভাবন, অংশীদারিত্বের জন্য এবং আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য। তৃতীয় বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, নবায়নযোগ্য এবং ক্লিন এনার্জি, দক্ষ জ্বালানি প্রযুক্তি, যন্ত্র, নিরাপদ উত্পাদন, নগর সেবায় যেতে হবে। চতুর্থত, আমরা ‘গ্রিন প্রবৃদ্ধি’ দিকে যাচ্ছি। কিন্তু প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই অর্থের অন্তত অর্ধেকটা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কাছে যেতে হবে। প্রযুক্তি বিনিময়কে ৫ম বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নামে বিশ্ব সুখকর অবস্থানে থাকতে পারে না। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ প্রযুক্তি ব্যাংক রয়েছে। কৃষি-স্বাস্থ্যে আমরা জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তিতে যেতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে। অথচ আমাদেরই সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। লাখ লাখ মানুষ নীরবে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। সমৃদ্ধির জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় দায়িত্ব ভাগ করে নেবে আশাবাদ করেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে আমরা ৪০০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। তিনি বলেন, আমরা কম কার্বন নিঃসরণ উন্নয়নের দিকে যাই। আমাদের উত্পাদন ক্ষেত্রকে আমরা ‘গ্রিন’ প্রযুক্তিতে রূপান্তর করি।
সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের বিরাট অংশ নিমজ্জিত হবে। এ রকম পরিস্থিতি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে? সেশনের সঞ্চালক থমাস এল ফ্রিডম্যানের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি সমুদ্রের পানি এক মিটার বৃদ্ধি পায় বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশ ডুবে যাবে। এটা মোকাবিলার জন্য আমরা নিজস্ব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমরা উপকূলে গ্রিন বেল্ট করছি, সবুজায়ন করা হচ্ছে। নতুন জেগে ওঠা চরে বনায়ন করা হচ্ছে। নিজস্ব সম্পদে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। ক্ষতি মোকাবিলা ও অভিযোজনে কাজ করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র তল বৃদ্ধির জন্য আমরা দায়ী নই। এ সমস্যা আমাদের তৈরি নয়। এটা উন্নত দেশগুলোর সৃষ্টি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্র তলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের জন্য এটা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এটা করছে। বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়া উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব।
কৃপ্র/এম ইসলাম