কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পঞ্চগড় জেলার করতোয়া নদী মাছে ভরপুর ছিল, এখন সেখানে অন্য রকম দৃশ্য; পানি নেই, আছে কেবলই বালুচর। আর সেই বালুচরে চাষ হচ্ছে ধান। পঞ্চগড়ের ৩৩টি শুকনো নদ-নদীর বালুচরে এখন চলছে বোরো ধানের চাষ। এ আবাদ থেকে ৩/৪ মাসের ভাত জোগাড় হচ্ছে ভূমিহীন কৃষকদের। জানা গেছে, উজানে ভারতের বাঁধ, এপারে অবৈধ নদী দখল আর নদী শাসনের ফলে পঞ্চগড়ের ৩৩টি নদ-নদী নাব্য হারিয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে। প্রস্থে কমে শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রবাহ। এসব নদ-নদীর বালুচরে পঞ্চগড়ের ভূমিহীন কৃষকরা চাষ করছেন বোরো ধান।
অন্য ফসলের আবাদ না হলেও নদীর বালুকাবেলায় বোরো চাষ করে হাজারো দরিদ্র কৃষক তিন-চার মাসের ঘরের ভাতের জোগাড় করছেন। খরচ কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। অবশ্য নদীর বালুচরে বোরো চাষ করতে সেচের পানি না লাগলেও অধিক ফলনের আশায় কৃষকরা রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করছেন বেশি। ফলে কৃষকের অভাব মিটলেও হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। নদ-নদী হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করতোয়া, মহানন্দা, চাওয়াই, কুড়ুম, তালমা, পাম, ডাহুক, গোবরা, বেরং, ছোট যমুনা, ছেতনাই, পেটকি, ঘোড়ামারা, মরা তিস্তা, সুই, আলাইকুমরী, তীরনই, রণচণ্ডী, টাঙ্গন, পাথরাজ, ভেরসা, আত্রাই, পাংগা, চিলকাসহ ৩৩টি নদ-নদী এখন বিস্তীর্ণ বালিয়াড়িতে পরিণত হয়েছে। এসব নদীর বুকে কৃষকরা বোরো আবাদ করছেন।
চলতি বোরো মৌসুমে এই ৩৩টি নদীর বালুচরে এ বছর প্রায় ১৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, প্রতিবিঘা বালুচরে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান উৎপাদন করছেন তারা। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় নদীর আশপাশের ভূমিহীন কৃষক এবং জেলেরা নদীর বালুকেটে আল বেঁধে বোরো আবাদের উপযুক্ত করে নিচ্ছেন। মত্স্যজীবীরা জানিয়েছেন, নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে এই তিন মাস নদীর চরে বোরোর আবাদ করতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। তারা আরও বলেন, ধান চাষে ব্যবহার করা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের সরাসরি প্রভাব পড়ছে নদীতে। এ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের মাছ।
পঞ্চগড় কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক জানান, বোরো ধান সাধারণত মাজরা পোকা ধরতে পারে। তাই নদীর বালুচরে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বোরো লাগানোর পরপরই জমিতে শুকনো ডাল অথবা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার সুযোগ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলে পাখি সব পোকা খেয়ে ফেলবে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন / কৃপ্র/এম ইসলাম