‘মটরশুটির শেঁকর ইউরিয়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাটোরের কৃষকরা মটরশুটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিগত বছরগুলোতে জেলায় আবাদি জমি ও ফলন উভয়ই বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মটরশুটি ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৮১২ হেক্টর জমিতে মটরশুটি চাষ হয়েছে। এর অধিকাংশই নাটোর সদর উপজেলায় যা ৬৯০ হেক্টর। এছাড়া বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬০ হেক্টর, লালপুরে ২৫ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ২২ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর। কৃষি বিভাগ আশা করছে, ৮১২ হেক্টর জমি থেকে ৮ হাজার ২২০ টন মটরশুটি ফলন হবে- মণ প্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকা হিসেবে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।
প্রতি বছর অক্টোবর মাসে জমি চাষ করে মটরশুটির বীজবপন করা হয়। বিঘা প্রতি ১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে শুধুমাত্র টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্রবিশেষ অনুখাদ্য এবং গোড়াপঁচা ও পোকারোধী কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তবে সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। তিন দফায় গাছ থেকে মটরশুটি সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, বিঘা প্রতি উৎপাদিত ২৫ মণ গড় ফলনের বাজার দর মণ প্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকা হিসেবে প্রায় ৫৮ হাজার টাকা।
নাটোর সদর উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া তার আড়াই বিঘা জমিতে মটরশুটি আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দু’দফায় গাছ থেকে মটরশুটি পেয়েছেন প্রায় ৫০ মণ। তৃতীয় দফায় আরও ১৫ মণ মটরশুটি পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, দেড় বিঘা জমিতে মটরশুটি চাষ করেছে। মটরশুটি উঠলে ঐ জমিতে পাট চাষ করবে। মটরশুটি গাছের ডালপালা ও শেঁকর মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তাই পরের ফসলে সার কম লাগে।
নাটোরের হয়বতপুর, দত্তপাড়া এবং ছাতনী বটতলা হাটে মৌসুমী সবজির সাথে প্রতিদিন শত শত মন মটরশুটি বিপণন হয়। নাটোর ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা নাটোরের মটরশুটির ক্রেতা। দত্তপাড়া হাটে মটরশুটি বিক্রি করতে আসা বড়হরিশপুর এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম সুমন জানান, ১২ মণ মটরশুটি বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে। মৌসুমের শুরুতে এই দর দ্বিগুণ ছিল বলে তিনি জানান।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম বলেন, মটরশুটির শেঁকর ইউরিয়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। তাই মটরশুটির জমি ইউরিয়া সার তো প্রয়োজন হয়ই না, অধিকন্তু পরবর্তী ফসল চাষাবাদে ঐ জমিতে ২০ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করলেই চলে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা মটরশুটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে মটরশুটি এই এলাকার অন্যতম অর্থকরি ফসলে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম