কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গলদা চিংড়ি উৎপাদনে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তরের স্বাদু পানির চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্ধিত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গুণগত মানসম্পন্ন গলদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার দখলের লক্ষ্যে প্রকল্পের সিংহভাগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের পথে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চিংড়ি খামারে উত্তম চাষ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনসহ পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
গলদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষি পর্যায়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রদর্শনী খামার স্থাপন, চিংড়ি পোনার মূল্য সহনশীল রাখা, গুণগত মানসম্পন্ন পোনার সরবরাহ নিশ্চিত করা, চাষিদের প্রশিক্ষণ, হ্যাচারি ও নার্সারিতে আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, চাষিদের মূলধন ও বাজারজাতকরণে সহযোগিতা প্রদান, আর্থিক ও কারিগরি সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে চাষিদের আধুনিক ও উন্নত পদ্ধতিতে গলদা চাষে উদ্বুদ্ধকরণে স্বাদু পানির চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে চিংড়ি খামার থেকে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি একটি স্থায়িত্বশীল চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন সম্ভব হবে।
দেশের ৬১টি জেলার ৪০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা যার সম্পূর্ণ অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের কার্যক্রম ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে এবং চলতি বছর এসব কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সিংহভাগ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে গলদা চিংড়ির মোট উৎপাদন ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাপিত পুরাতন ১৯টি গলদা চিংড়ি হ্যাচারি মেরামত ও সংস্কার সাধন করা হয়েছে এবং এসব হ্যাচারিতে ইতোমধ্যে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে ১৯টি এবং প্রকল্পের আওতায় বেসরকারিভাবে স্থাপিত ১৮২টি নার্সারি প্রদর্শনী খামারে জুভেনাইল উৎপাদন কার্যক্রম চলমান আছে বলেও জানা গেছে।
এ প্রকল্পের অধীনে ৪৬,২০০ জন মৎস্য চাষি এবং বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। ইতোমধ্যে ৪৫,১৪৬ জন মৎস্য চাষি এবং বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছর আরো ৩৭৬ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের উদ্যোগে চাষি পর্যায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশক ও রোগমুক্ত গুণগতমানসম্পন্ন চিংড়ি উৎপাদনে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কার্যক্রম চলমান আছে। এর অংশ হিসেবে দেশের ৭ বিভাগে ৭টি কর্মশালা এবং নিষিদ্ধ কীটনাশক ও এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কিত জেলা পর্যায়ে ১৪টি সচেতনতা সভার আয়োজন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে আরো ৩২টি সচেতনতা সভা আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, গলদা চিংড়ির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৭টি প্যাকেজের প্রশিক্ষণ মডিউল ও চাষ নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্প্রসারণ কার্যক্রম প্রচারণার জন্য পোস্টার, লিফলেট ও বুকলেট তৈরি করা হয়েছে।