কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড। ক্ষেতে শিম। জমির আইলে শিম। খালের পাড়ে শিম। বাদ যায়নি বেড়িবাঁধ আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশও। এতে বিভিন্ন রঙের ফুল আর থোকা থোকা শিমে শোভিত হয়েছে উপজেলার প্রতিটি ফসলের মাঠ। বিগত বছরের তুলনায় এবার সীতাকু-ে শিমের ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে শীতকালিন বাজারে শিমের চাহিদা থাকায় ন্যায্য দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষচন্দ্র নাথ জানালেন, এবার সীতাকু-ে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রতি হেক্টরে ৩০ টন করে প্রায় ৮৪ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। এখানে ল্যাইটা, বাইট্যা, পুঁটি ও ছুরি এ চার প্রকার জাতের শিম হয়। তবে এদের মধ্যে ল্যাইটা শিম এখানে বেশি ফলন হয়ে থাকে।
কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা যায়, উপজেলার পাঁচ হাজারের বেশি চাষি শিম চাষ করেন। সর্বাধিক শিম উৎপাদন হয় উপজেলার উত্তরে নুনাছড়া থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত। এই হিসাবের বাইরে পাহাড়ি এলাকায় ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে শিম চাষ করে আরও পাঁচ হাজার মেট্রিক টন অধিক উৎপাদন করে। সীতাকুণ্ডের মোহন্তের বাজার, বড় দারোগারহাট, শুকলাল হাট, কুমিরা হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হাটে চাষিরা জমি থেকে শিম তুলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কমমূল্যে কিনে ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
কৃষক এরশাদ জানান, শিম চাষ করে আমরা প্রচুর লাভবান হচ্ছি। এই চাষে মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে ভালো আয় করা যায়। তিনি বলেন, তার দুই একর জমিতে প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দেয়া, কীটনাশক ওষুধ ও লেবারসহ পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তবে কৃষকরা জানান, চলতি মাসের শুরুতেই অধিক কুয়াশার কারণে শিমগাছের ফুল ঝরে পড়ে গেছে। শিমের ওপর কালচে এক ধরনের দাগ পড়ে গেছে। তা নাহলে আরও ভালো ফলন হতো।
একসময়ের ধানের ব্যবসায়ী কাশিনাথ দাশ এখন শিম চাষ করেই সংসার চালান। তিনি বললেন, ‘কাত্তি কোটা’ আর ‘ছুরি’ দুই জাতের শিমই বেশি হয় সীতাকু-ে। একটি লাল, অন্যটি সবুজ-সাদা লম্বাটে। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ নজর আছে বলেই সীতাকু-ের শিম দেশের গ-ি ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার মাটি শিম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
উপজেলার ভাটেরখিল এলাকার কৃষক আবুল কালাম জানান, অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই দুই একর জমির আমন ধানের আইলে শিম বীজ বপন করেন। ৪০ দিনের মাথায় শিম পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ওই সময় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কাঁচা শিম বাজারে বিক্রি করেন। সে থেকে দুদিন পর পর গড়ে ১৫০০ টাকার শিম বাজারে বিক্রি করেন।
উপজেলার ভাটেরখিল এলাকার কৃষক আবুল কালাম জানান, অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই দুই একর জমির আমন ধানের আইলে শিম বীজ বপন করেন। ৪০ দিনের মাথায় শিম পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ওই সময় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কাঁচা শিম বাজারে বিক্রি করেন। সে থেকে দুদিন পর পর গড়ে ১৫০০ টাকার শিম বাজারে বিক্রি করেন।
হাতিলোটা এলাকার বিদেশ ফেরত যুবক জাফর আহাম্মদ বলেন, ছোটবেলায় শিম লাগানো হতো ভিটেবাড়িতে। জমিতে হতো ধান। চাহিদা বেশি হওয়ায় যেখানেই সুযোগ মিলছে শিম লাগাচ্ছেন সবাই। সমস্যা হচ্ছে, যত বেশি চাষাবাদ হচ্ছে শিমগাছে আসছে নতুন নতুন রোগব্যাধিও। অনেক সময় ওষুধেও কাজ করছে না।
সার-কীটনাশক বিক্রেতা মেসার্স আলী ট্রেডার্সের মালিক মো. আলী যায়যায়দিনকে বলেন, অনেক নিম্নমানের ও নকল ওষুধে বাজার সয়লাব হয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি চাষিদের সঠিক মাত্রাজ্ঞান না থাকার কারণেই ওষুধ কাজ করছে না এটাও সত্য। সীতাকু- সবজি ভা-ার নামের আড়তের মালিক সুনীল দাশ জানান, শিমের রাজ্য সীতাকুকুণ্ড এখানকার শিমের রং, রূপ আর স্বাদই আলাদা। দেশজুড়ে আলাদা কদর রয়েছে এখানকার শিমের। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা জানান, এখানের মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। তবে কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শিমের গুণাগুণ হ্রাস পাচ্ছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম