কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ইলিশের পঞ্চম অভয়াশ্রম পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকা। সেখান থেকে বছরে গড়ে ১০ হাজার টনের বেশি ইলিশ মাছ আহরণ করা হয়। অথচ এ আন্ধারমানিক নদীর মোহনার কাছেই নির্মাণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে আশুগঞ্জ রুটে চালু হবে বাংলাদেশ-ভারত নৌ-ট্রানজিট। এজন্য ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ করিডোর)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকটি নৌবন্দর নির্মাণসহ বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে ড্রেজিংও করতে হবে নৌপথটি। যদিও এ রুটের আশপাশেই রয়েছে ইলিশের অভয়ারণ্য।
চাঁদপুর টার্মিনালের কাছে ডিম ছাড়ে মা-ইলিশ। এছাড়া হরনিয়া, আলুবাজার, হিজলা, মোজা চৌধুরী, ভোলার ইলিশা, বেদুরিয়া, লাহারহাট, বদ্দারহাট, দেউলখা ও চেয়ারম্যান ঘাট ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছাকাছি এলাকায় ইলিশ ডিম ছাড়ে। এসব ল্যান্ডিং স্টেশনে টার্মিনাল নির্মাণ, পাড় রক্ষা, জেটি নির্মাণসহ ইত্যাদি কারণে নদীতে পলি জমার হার বাড়বে। এ কারণে ড্রেজিংও বাড়াতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইলিশের অভয়ারণ্য ও ডিম ছাড়ার স্থানগুলো। এভাবেই নৌ-ট্রানজিটের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রভাব পড়বে ইলিশ উত্পাদনে, যা প্রকল্পের পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভয়াশ্রম মেঘনা নদী। এ রুটে নৌ-ট্রানজিট চালু হলে নিয়মিত নদী ড্রেজিং করতে হবে। তখন ড্রেজিংয়ের শব্দে ও পানি দূষণে অভয়াশ্রম থেকে অনেক দূরে সরে যাবে ইলিশ। এমনকি বাংলাদেশের সীমানাও ছাড়িয়ে যেতে পারে জাতীয় এ মাছ।
মত্স্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইলিশকেন্দ্রিক অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে সম্প্রসারণ হচ্ছে। ২০০২ সালের পর থেকেই অভয়াশ্রম ঘোষণার মাধ্যমে মাছটির উত্পাদন বৃদ্ধিতে নজর দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার, ভোলা জেলার মদনপুর বা চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলা অংশে নিম্ন পদ্মার ২০ কিলোমিটার ও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকাও ইলিশের অভয়াশ্রম। এসব অভয়াশ্রমের আশপাশেই কিংবা স্বল্প দূরত্বে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ সামনের দিনে ইলিশ উত্পাদন বৃদ্ধি মারাত্মক ব্যাহত করবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, পায়রা বন্দর ও আশপাশে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। রামপালে বড় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ চলমান। একই সঙ্গে সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের ব্যাপক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এগুলোর সম্মিলিত প্রভাব কী হবে, সে বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এখনই সমীক্ষা করতে হবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর পায়রা এলাকায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ঘোষণাকৃত প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। দুটি অভয়াশ্রমের এত কাছাকাছি বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ইলিশ প্রজননের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারোয়ার ইমতিয়াজ হাশমী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্প নির্মাণ ও পরবর্তী পর্যায়ে পরিবেশের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে কিনা, তা মনিটরিং করা হবে। ক্ষতিকর হলে তা উপশমের ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনবলস্বল্পতা সত্ত্বেও বৃহত্ প্রকল্পগুলো আমরা যথাসম্ভব মনিটরিং করি। পায়রা প্রকল্পটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় পরিবেশের ক্ষতিকর যেকোনো বর্জ্য যাতে নির্ধারিত মানমাত্রার মধ্যে থাকে, সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম