কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কোয়েল পাখির খামার করে কয়েক বছরেই লাখপতি হয়েছেন দেশের ২২ জেলার দেড় শতাধিক যুবক। প্রশিক্ষণ নিয়ে অল্প পুঁজিতে কোয়েল পাখির খামার করে এ সাফল্য পেয়েছেন তারা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত চার বছরে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর,রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় গড়ে তোলা হয়েছে এ পাখির খামার।
কোয়েল পাখির খামারি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কামাল হোসেন বলেন, তিন বছর আগে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করি। দুই বছরের মধ্যে আমি নিজের কেনা জমিতে বসতঘর করেছি। বর্তমানে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তবে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র কিনতে পারলে আয় আরও বেড়ে যাবে। জানা গেছে, কোয়েল খামার করে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার কামাল হোসেন এখন লাখপতি। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার কাছ থেকেই বাচ্চা নিয়ে কোয়েল চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় আরও অনেকে।
উল্লেখ্য, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোয়েল পাখি ও তার ডিম দেশি মুরগির চেয়েও বেশি প্রোটিনযুক্ত। সরেজমিন দেখা গেছে, দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী বাজারের পাশেই কামালের ‘কোয়েল হ্যাচারি’। বর্তমানে ১৫০০ কোয়েল পাখি রয়েছে তার হ্যাচারিতে। প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ ডিম দিচ্ছে। প্রতি পিস ডিম পাইকারি ৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এসব ডিম বিক্রি করে প্রতিদিনের আয় ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এ ছাড়া কোয়েল পাখিও বিক্রি করছেন। যে কোয়েল ডিম দেয় সেগুলো এক জোড়া বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়, আর পুরুষ কোয়েল বিক্রি হয় এক জোড়া ১৫০ টাকায়।
কোয়েল খামারি কামাল জানান, একটি পরিপূর্ণ কোয়েলের ওজন হয় ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। দুই মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। পর্যাপ্ত খাদ্য পেলে এক টানা ১৮ মাস ডিম দেয়। কোনো ত্রুটি হলেও কমপক্ষে এক বছর একটানা ডিম দেয়। কামাল হোসেন জানান, শুরুর আগে মাসখানেক সময় গেছে প্রশিক্ষণ ও খামার ঘর তৈরি করতে। প্রথমে ৫০০ বাচ্চা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। ময়মনসিংহের জারিয়া এলাকা থেকে প্রতিটি বাচ্চা ক্রয় করে এনেছিলেন ৪০ টাকা দরে। পর্যায়ক্রমে বাচ্চা আনা হচ্ছে এবং বড় করে বিক্রিও করছেন। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কোয়েল তিনি বিক্রি করেছেন। আর এখন খামারে রয়েছে ১৫০০ কোয়েল। এগুলোর খাদ্য বাবদ মাসে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ডিম বিক্রি থেকেই মাসে আসছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সব খরচ মিটিয়ে ডিম ও পাখি বিক্রি করে এখন মাসিক তার আয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানের যন্ত্র থাকলে আয় আরও বাড়ত। যন্ত্র ক্রয় করতে ১ লাখ টাকারও বেশি লাগে। কিন্তু টাকার অভাবে সে যন্ত্র ক্রয় করতে পারছেন না। তাই সব ডিম বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। আর ময়মনসিংহ থেকে একটি বাচ্চা ক্রয় করে আনতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সঙ্গে রয়েছে পরিবহন খরচ। এ জন্যই ডিম ফোটানোর যন্ত্র থাকলে আয় কয়েকগুণ বেড়ে যেত। অন্যদিকে এলাকায় কোয়েল চাষে অনুপ্রাণিতদের কম মূল্যে কোয়েল সরবরাহ করা যেত।
কামাল কোয়েলের খামার গড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নরসিংদী জেলার মাহাবুবকে দেখে। এরপর তিনি ময়মনসিংহের জারিয়া এলাকায় একটি কোয়েলের খামারে গিয়ে ১০ দিন থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে সাভার এলাকায় আরেকটি খামারেও ১০ দিন প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে খামারের ঘর নির্মাণ করে ৫০০ বাচ্চা এনে শুরু করেন কোয়েল চাষ। চাষে সাফল্যের পর এবার কামালের পরিকল্পনা একই সঙ্গে টার্কি ও তিতির মুরগি পালনের। খুব সহসাই টার্কি ও তিতির মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসবেন বলেও জানান তিনি। সংসারের অভাব দূর হয়েছে জানিয়ে মুখে সুখের হাসি ফুটিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে, আর ছোট মেয়ে
এবার প্রাথমিক থেকে সমাপনী দিল। এদের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণের খরচ নিয়ে কয়েক মাস আগেও সব সময় চিন্তায় থাকতে হতো। সংসার জীবনের দীর্ঘ সময় পর এখন তার অভাব ঘুচেছে। কামালের মতো সাভারের রাসেল রহমান, নরসিংদীর মিজান খান ও সিলেটের রাশেদ আহমেদ নামের যুবকরাও লাখপতি হয়েছেন।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন / কৃপ্র/এম ইসলাম