এসএম মুকুলঃ দেশীয় বাগানগুলোয় হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদন দীর্ঘদিন ১ হাজার ২০০ কেজির ঘরে থাকলেও গত বছর তা দেড় হাজার কেজি ছাড়ায়। ২০১৫ সালেও চায়ের হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল ১ হাজার ২৭০ কেজি। ২০১৬ সালে এ পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড ১ হাজার ৫৮৭ কেজিতে দাঁড়ায়। চা বোর্ডের বার্ষিক চা উৎপাদন প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুন-অক্টোবর সময়ে দেশের ১৬২টি বাগান থেকে গড়ে ১০ মিলিয়ন কেজিরও বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে চা উৎপাদন অচিরেই ১০০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন চা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এক কাপ চা, কত গল্প বলে সকাল, বিকেল, সন্ধেবেলা…। এ গানটির মতো চা নিয়ে আড্ডা প্রিয় বাঙালির গল্পের যেন শেষ নেই। বাংলাদেশের চাশিল্প প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী। আমরা সবাই জানি পানির পর চা হলো বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়। প্রতিদিন সারাবিশ্বে গড়ে দুই বিলিয়ন কাপ চা পান করা হয়। সজীবতা, সি্নগ্ধতা, প্রশান্তি আর কর্মচাঞ্চল্যের জন্য বিশ্বজুড়ে চায়ের ব্যাপক প্রসার ও জনপ্রিয়তা। ইংরজিতে ঞঊঅ, গ্রিকদেবী থিয়ার নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়।
চা-গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস। চা-পাতা কার্যত চা-গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের অংশ যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশে চা উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা বৃদ্ধির হার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি। ফলে উৎপাদন বাড়লেও চা আমদানি কমছে না। দেশীয় চাহিদার শতভাগ মিটিয়ে রপ্তানি বাড়াতে হলে ভালো চা উৎপাদনেও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, দেশে ১৬২টি চা বাগানে মোট ৬৪ হাজার ৮৮৬ হেক্টর চাষযোগ্য ভূমি রয়েছে।
এর মধ্যে ৫৯ হাজার ১৮ হেক্টর জমিতে চা চাষ হলেও বাকি ৫ হাজার ৮৬৮ হেক্টর অনাবাদি রয়েছে। গত এক দশকে চা বোর্ডের নেয়া সম্প্রসারণ কার্যক্রমের আওতায় পঞ্চগড় ও বান্দরবান জেলাকে চা চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের বাগান ক্ষুদ্রায়তনের যার ভূমির পরিমাণ ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। আর পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ১২৩ হেক্টর জমি রয়েছে চা চাষের আওতায়।
সবুজ চাদরে ঢাকা চায়ের দেশ সিলেটে বর্তমানে ৪৭,৭৮১ হেক্টর জমিতে ১৬৩টি চা বাগান রয়েছে, যার অধিকাংশ মৌলভীবাজার জেলায়। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯০টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ২২টি এবং হবিগঞ্জে ২৩টি চা-বাগান রয়েছে।
এ ছাড়া পঞ্চগড়ে সাতটি এবং রাঙামাটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে চা-বাগান রয়েছে। বাংলাদেশ অর্গানিক টি পঞ্চগড়ে চা উৎপাদন করা শুরু করেছে। দেশে বড় চা-বাগানগুলো ছাড়াও ২৫৭ জন ক্ষুদ্র চা খামারির আওতায় মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৪ হেক্টর জমির মধ্যে ৬২ হাজার ২৯৭ হেক্টর চা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চা চাষ হয় ৫৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে যা মোট চাষযোগ্য জমির ৮৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অবশিষ্ট ৫৩ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমিতে এখনো চা চাষ শুরু হয়নি। দেশের বেশির ভাগ চা বাগান কয়েক দশকের পুরনো হওয়ায় চায়ের উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ লোক চাশিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিকই আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
লেখক : কৃষি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং উন্নয়ন গবেষক।