এসএম মুকুল: চা চাষের জন্য প্রয়োজন অধিক বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ ঢালু পাহাড়, অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও তাপের প্রয়োজন হয় বলে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলই চা চাষের জন্য অধিক উপযুক্ত। চাশিল্পের বিকাশে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি চা জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। চা জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে প্রতিবছর বাংলাদেশে চা উৎপাদন ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও মানুষের চা পানের প্রবণতা বৃদ্ধি ও অভ্যাস পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ ভোগ ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে চা উৎপাদনে ১১তম।
চাশিল্পে বাংলাদেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্র্যান্ডকে পরিচিত করে তুলেছে দেশে-বিদেশে। যেমন- এইচআরসি গ্রুপের এইচআরসি চা, ইস্পাহানি মির্জাপুর চা, ইউনিলিভারের তাজা ব্র্যান্ডের চা, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চা, দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেডের ফিনলে চা, আবুল খায়ের গ্রুপের সিলন গোল্ড চা, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের প্রাণ চা, কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের অর্গানিক মিনা চা। দেশে প্রায় ০.৮১ (শূন্য দশমিক ৮১ ভাগ) জিডিপি অর্জিত হয় চাশিল্প থেকে। বর্তমানে চায়ের বার্ষিক উৎপাদন ৬ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার কেজি।
উন্নয়নে রূপকল্প ও চাশিল্প
চা উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ চা বোর্ড ৯৬ হাজার ৭৩৫ দশমিক ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ বছরমেয়াদি একটি কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সরকারের নীতি এবং ভিশন-২০২১ সালকে সামনে রেখে পরিকল্পনাটিতে তিন পর্যায়ে ১০টি প্রকল্প প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দেশের চাশিল্পের উৎপাদন বাড়াতে ‘উন্নয়নের পথনকশা: বাংলাদেশ চাশিল্প‘ নামে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চা বোর্ড। ২০২৫ সালে দেশে চা উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াবে ১৪০ মিলিয়ন কেজি।
চা বোর্ডের তথ্যে জানা যায়, প্রকল্পটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় চা-বাগান সম্প্রসারণ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, গভীর ও হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন, বাগান এলাকায় কূপ খনন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ ও সড়ক উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের চা চারা রোপণ করা হবে। ১০ হাজার হেক্টরে চা-বাগান সম্প্রসারণ করা হবে।
১৫ হাজার চা শ্রমিকের গৃহ নির্মাণ ও ১৫ হাজার টয়লেট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় ৪৭ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, ৫০টি কালভার্ট ও চারটি সেতু নির্মাণ করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘মাদার ক্লাব‘ করা হবে। চায়ের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১১৫৬২৯.৭৬ হেক্টর থেকে বর্ধিত করারও প্রচেষ্টা এই কর্মপরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য। আশা করা হচ্ছে চাশিল্প উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে চাশিল্পে বিপ্লব ঘটবে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর চা রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
লেখক : কৃষি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং উন্নয়ন গবেষক।