কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত পাঁচ বছরে রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগানের পরিধি বেড়েছে সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর। আম উৎপাদন বেড়েছে আড়াই লাখ টন। আম রফতানি হচ্ছে ইউরোপের বাজারে। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি আমবাগান বেড়েছে রাজশাহীতে, ৭ হাজার ৯৭৫ হেক্টর। এর পর নওগাঁয় ৪ হাজার ৮৬৯ হেক্টর, নাটোরে ২ হাজার ৪৭৩ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ১৯০ হেক্টর বাগান বেড়েছে।
২০১১-১২ অর্থবছরে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমবাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। এর প্রায় অর্ধেকই ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে, ২৩ হাজার ২৮০ হেক্টর। এছাড়া রাজশাহীতে ৮ হাজার ৯৮৬ হেক্টর, নওগাঁয় ৭ হাজার ৮০১ হেক্টর ও নাটেরে ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর আমবাগান ছিল। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে চার জেলায় আমের উত্পাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩ টন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে উত্পাদন হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার টন আম। এছাড়া রাজশাহীতে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮৮ টন, নওগাঁয় ৭৭ হাজার ৩৮৫ টন এবং নাটোরে ২৮ হাজার ২০০ টন আমের উত্পাদন হয়। পরের অর্থবছরে এ অঞ্চলে আমবাগানের পরিমাণ ৬ হাজার ১৯৩ হেক্টর বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৬১০ হেক্টর। এ সময়ে উত্পাদন ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৭ টন বেড়ে হয় ৬ লাখ ১ হাজার ১৩৪ টন।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজশাহী অঞ্চলে ৫২ হাজার ৪০৫ হেক্টর বাগান থেকে আমের উত্পাদন হয় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫১৪ টন। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমের উত্পাদন কিছুটা কমে। ওই অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৭২২ হেক্টর বাগান থেকে উত্পাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৬ টন আম। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগানের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর। এ হিসাবে পাঁচ বছরে বাগান বেড়েছে ১৬ হাজার ৫০৭ হেক্টর। আলোচ্য অর্থবছরে আমের উত্পাদন হয় ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ টন। এ হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে আমের উত্পাদন বেড়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮১৫ টন। এ বছরও বাগান কিছুটা বেড়েছে। ফলে উত্পাদনও বাড়বে বলে আশা করছেন কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
শীত প্রায় শেষ হয়ে আসায় এরই মধ্যে আমগাছে মুকুল দেখা দিয়েছে। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের আমগাছগুলো। সাধারণত জানুয়ারির শেষে মুকুল আসা শুরু হয় এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মুকুল আসায় এখন চাষীরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় ২০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রায় সব গাছে মুকুল চলে আসবে। এ বছর ভালো আবহাওয়া বিরাজ করায় মুকুল আসার পরিমাণ বেশি। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি
তিনি বলেন, এখন চাষীরা অনেক বেশি সচেতন। বছরজুড়েই তারা বাগানের পরিচর্যা করে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের চাষ হচ্ছে। হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের কারণে এখন সারা বছরই আম পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, মুকুল আসার আগেই প্রতি লিটার পানিতে আধা মিলিলিটার ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের তরল এবং দুই গ্রাম ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আম গুটি হওয়ার পরও আরেক দফা একই মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আম মার্বেল আকার নিলে ফ্রুটব্যাগিংও করা যেতে পারে। সেচসহ নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চলতি মৌসুমেও আম রফতানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছর রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কেজি আম রফতানি হয় ইউরোপে। মূলত ফ্রুটব্যাগ পদ্ধতিতে রাসায়নিক ছাড়াই উত্পাদিত আম বিদেশে পাঠানো হয়। বাঘার কালিগ্রামের আমচাষী শফিকুল ইসলাম এসব আম রফতানি করেছিলেন। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের আরো অনেকে আম রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবদুলাল ঢালি বলেন, মাঠপর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমচাষীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। উত্পাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম