কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদী প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদে সামান্য প্রবাহ থাকলেও বাকিগুলোয় প্রবাহ নেই বললেই চলে। নদী ও জলাশয়ে পানি না থাকায় বাড়ছে তাপমাত্রা। এ অবস্থায় এখানকার জলজ প্রাণীসহ সার্বিক জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। মূল নদীতে পানি না থাকায় শাখানদীগুলোও শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এসব নদীর তলদেশ এখন কৃষিজমিতে পরিণত হয়েছে। চাষাবাদ হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল। শুকিয়ে গেছে এ অঞ্চলের বিলগুলোও। নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও অনেক নিচে নেমে গেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় জলজ প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু প্রজাতি। আর নদীর নাব্যসংকটে জীবিকা হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের মত্স্যজীবীরাও।
নদীপারে বসবাসকারী মানুষরা জানান, গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর দুকূল ছাপিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে দেখা দেয় ভয়াবহ সংকট। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের পারের বাসিন্দারা জানান ‘আমরা নদীপারের মানুষ। নদীর পানির সঙ্গে আমাদের সবকিছু জড়িত। কিন্তু নদীতে এখন পানি নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, যেন নদীগুলো ড্রেজিং করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়।’
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নদ, খাল-বিল ও জলাশয়গুলো আমাদের পরিবেশের প্রাণ। কিন্তু এগুলোয় পানি না থাকায় জীব-বৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বাঁচাতে নদ-নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে জলাশয়গুলোও রক্ষা করতে হবে।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, সরকার নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিগুলো প্রতি মাসে মিটিং করে বিভিন্ন সুপারিশ নদী রক্ষা কমিশনের কাছে পাঠাচ্ছে। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে এসে নদীগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনার কথা বলে গেছেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম