কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সারাবিশ্ব আজ প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে। উন্নত দেশগুলি প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে । কৃষিপ্রধান বাংলাদেশও কৃষিতে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহারে দিন দিন এগিয়েছে। সনাতনি কৃষি যন্ত্রপাতির জায়গায় এখন এই দেশে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি জায়গা করে নিচ্ছে যা খুবই আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিউিটের হিসাব মতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির শতকরা ৯০ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আশির দশক হইতে আমাদের দেশে কৃষিতে ক্রমান্বয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে।
বর্তমানে কৃষির চাষাবাদে ৩০ প্রকারের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহূত হচ্ছে । সময়ের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার কৃষকের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল-জোয়াল, মই ও হালের গরুর যুগ এখন শেষের পথে। কেবল জমি চাষই নহে, জমিতে নিড়ানি হতে শুরু করে সার দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধানকাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ সবই চলছে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে। ফলে চাষাবাদে যেমন কম সময় লাগছে, তেমনি উৎপাদনও আগের তুলনায় বহুগুণ রেড়ে গিয়াছে।
আমরা জানি, বিশ্বে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিক হতে র্যাংকিংয়ের প্রথম অবস্থানে আছে চীন। সেখানে অসংখ্য আধুনিক কৃষি ফার্ম বা খামার গড়ে উঠেছে এবং সেখানে প্রায় ৩০০ মিলিয়নের অধিক কৃষক কাজ করছেন। বাংলাদেশ চীনের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী দেশ। তাই বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে আরও সাফল্যের জন্য চীনের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করিতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করছে। প্রথমে এই ব্যাপারে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবনা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দেন।
এই দেশে যেইসব কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহূত হচ্ছে, তার অন্যতম হলো কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এই যন্ত্রের মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা হইতে ফসলের দানা আলাদা করার কাজ করা যায় । ইহাছাড়া ক্ষুদ্র জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলার, বড় জমি চাষে ট্রাক্টর বা হুইল ট্রাক্টর, বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্য ব্রডকাস্ট সিডার, নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য সিড ড্রিল, গভীরভাবে কঠিন স্তরের মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান/বীজ শুকানোর জন্য ড্রায়ার, ধান, গম, ভুট্টা শুকানোর জন্য ব্যাচ ড্রায়ার, শস্য কাটার যন্ত্র পাওয়ার রিপার মেশিন, ঝাড়ার যন্ত্র ইউনার প্রভৃতি। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে তা হলো পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ইউনার, ইউডার (নিড়ানির যন্ত্র), ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াই কল ইত্যাদি। এইজন্য সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, যশোর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সেচপাম্প, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরির বেশকিছু কারখানাও গড়ে উঠেছে ।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর গড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। উৎপাদন হইতে বাজারজাত পর্যন্ত প্রায় ১৪ শতাংশ শস্য বিনষ্ট হয় যার পরিমাণ ৪২ লক্ষ টন। যদি চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি পুরাপুরি ব্যবহার সম্ভব হয়, তা হলে এই সমস্যা অচিরেই দূর করা সম্ভব। এদিকে কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ১৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়াছে সরকার। এতে ৫০ জেলার ২০০ উপজেলায় ৩২ হাজার খামারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। এতে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে । এই ধরনের প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কৃষিজমি হ্রাসের প্রেক্ষিতে খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও অধিক ফসল উত্পাদনে আমাদের কৃষির আধুনিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই । তাই কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভ করতে সরকারি-বেসরকারিভাবে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম