কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাড়িটার ছাদের দিকে তাকালে মনে হয়, যেন ফাগুনের ছোঁয়া লেগেছে তাতে। সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠের লাবসা এলাকায় চোখ জুড়ানো এ বাড়িটির মালিক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী শাহিনা আক্তার। এই দম্পতি তাদের তিন হাজার দুইশ বর্গফুট বাড়ির ছাদে কয়েকশ গাছগাছালির একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনতলা এই বাড়ির দুটি ছাদ। দোতলাতে একটি ও অপরটি তিনতলায়। বাগান করার জন্যই এই দম্পতি বাড়িতে দুটি ছাদ তৈরি করেছেন। এ কারণে এলাকার মানুষের কাছে বাড়িটির পরিচয় এখন ‘কৃষিবাড়ি’ হিসেবে।
মনিরুজ্জামান-শাহিনা দম্পতি ছাদ দুটিতে তারা দেশি-বিদেশি ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধিগাছ লাগিয়েছেন। শেখ মনিরুজ্জামান-শাহিনা দম্পতি জানালেন, বাড়ির ছাদে বাগান করা খুব একটা কঠিন কাজ না। ইচ্ছে করলে যে কেউই ছাদে ফলমূল, শাকসবজির বাগান তৈরি করতে পারেন। এতে করে শাকসবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কোনও পরিবার আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারে। পাশাপাশি অক্সিজেনও দেয় এসব গাছগাছালি।
বাড়িতে ঢোকার পথেই রয়েছে, সারি সারি ঝাউগাছ। রয়েছে আম ও আমড়াগাছ। আমড়াগাছে পাতা না থাকলেও থোঁকা থোঁকা আমড়া ঝুলে রয়েছে তাতে। এর পাশেই রয়েছে আবার কামরাঙ্গাগাছ। এছাড়া টক ও মিষ্টি বরই গাছে ঝুলছে। মাটির ওপর বানানো মাচানে ঝুলছে, বড় বড় বেশ কয়েটা লাউ। প্রায় এক বিঘা জমিতে ভরপুর বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধিগাছ। কোথাও একটুও ফাঁকা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ বাড়ির ছাদ দুটিকে ঘিরে। বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে চক্ষু ছানাবড়া। মৌসুমি শাকসবজি আর ফুল আর ফলে ভরে গেছে ‘কৃষিবাড়ি’র ছাদের বাগান।
বাগানপ্রিয় দম্পতি আরও জানালেন, তাদের বাড়ির ছাদ দুটিতে রয়েছে, ২২ প্রজাতির গোলাপ, ডালিয়া, জিনিয়া, পেনজি, পাফায়ার বলসহ দেশি-বিদেশি ফুল। রয়েছে হাসনা হেনা, সাপে কাটার ঔষধি গাছও। তুলসী, ঘৃতকুমারী, রক্ত করবী গাছও লাগানো রয়েছে ছাদে। টপের গাছে কমলালেবু, মালটা ও টমেটো ধরেছে। মনিরুজ্জামান ও শাহিনা বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে গাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে গাব, ঝাউগাছ ও ভূতেরগাছ হিসেবে পরিচিত ‘শাড়া’ গাছও লাগানো হয়েছে। ছাদে বাতাবিলেবু, কদবেল, দেশি বেল, পাম ফলসহ অসংখ্য ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। থোঁকা থোঁকা মাল্টা পেকে হলুদ হয়ে রয়েছে।
বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে,‘প্যাসিফিক প্যালেস’। শান্ত-সুনিবিড় ছায়াঘেরা বাড়িটির দোতলায় উঠে পূর্বদিকে তাকালে চোখে পড়ে আদিগন্ত ফসলের মাঠ। বাড়ির তিনপাশ সবুজের চাদরে ঘেরা। শেখ মনিরুজ্জামান ও শাহিনা দম্পতির করা বাগানটি জেলার সেরা ছাদবাগান নির্বাচিত হয়েছে। তাদের ছাদের ওপর বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদে বাগান করার প্রতি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, তারা দুজনই ছোটবেলা থেকে বাগান করতেন। মেধা, মনন ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন এই ‘প্যাসিফিক প্যালেস’। শেখ মনিরুজ্জামান ও শাহিনা বলেন, এলাকার কারো কিছু হলে আমাদের বাড়িতে আসেন। সর্দিকাশি হলে শিউলি ফুল, আমাশয় হলে থানকুনিসহ বিভিন্ন ঔষধিগাছ নিয়ে যান তারা। তাদের বড় ছেলে হাসানাত বলে, ‘মায়ের সাথে বাগান পরিচর্যার কাজ করি। এলাকার অনেকে বলেন, ‘কৃষিবাড়ি!’ তখন শুনতে অনেক ভালো লাগে। এলাকার সবাই আমার মা ও বাবার কাজের অনেক প্রশংসা করেন।’
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি বছরের অর্ধেক সময় জাহাজে থাকি। তারপরও যে সময়টা বাড়িতে থাকি, বাগান নিয়ে পড়ে থাকি। সমুদ্রে থাকলে কী হবে, সেখানেও (জাহাজে) বাগান করেছি। আমার বাবা বাগান করতেন। তা দেখে সেই ছোটবেলা থেকেই বাগানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি।’ তবে সব কৃতিত্ব তার স্ত্রীকে দিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি বেশি সময় বাইরে থাকি। আর ও (শাহিনা আক্তার) বাগানের দেখভাল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে আমাদের বাগানের ছবি ও সেলফি তুলতে এখানে আসেন। পরিচালক জিএম সৈকতের বেশ কয়েকটি নাটকের শ্যুটিংও হয়েছে আমাদের ছাদে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ছাদে কমলালেবু, কাগজি লেবু, ছবেদা, সাদা জামরুলসহ আরও অনেক ফল রয়েছে। এখানে যে বিষমুক্ত ফল হয়, তা আমরা খাই ও মেহমান এলে তাদের আপ্যায়ন করি। আমার ছাদের মালটা বেশ সুস্বাদু।’ শাহিনা আক্তার মনে করেন, বাগান পরিচর্যা প্রতিদিনের গৃহস্থালি কাজের মতোই হয়ে গেছে। একদিন কাজ না করলে মনে হয়, কিছু একটা কাজ করা হয়নি। গাছগুলো যেন তাদের কাছে একেকটি সন্তানের মতো হয়ে গেছে।
সুত্রঃ এটিএন টাইম্স / কৃপ্র/এম ইসলাম