কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আম ও বেগুনের (ফ্রুট ব্যাগ) পরার কথা অনেকেরই জানা। তবে কলাও এখন ফ্রুট ব্যাগ পরতে শুরু করেছে। কলার (ফ্রুট ব্যাগ) পরার কথা জানা গেল নাটোর সদর উপজেলার রামপুরের কলাচাষি রফিকুল ইসলামের কলাবাগানে । বালাইনাশকের ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত কলা পেতে দেশে এই চাষিই প্রথম কলার কাঁদি বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগে মুড়িয়েছেন। মাঠ দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে তিনি কলা সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন। এ সময় বেশ কয়েকজন উদ্যান গবেষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
রফিকুল ইসলামের কলাবাগা দেখা যায়, প্রতিটি গাছের কলার কাঁদি বিশেষ ধরনের সাদা ও বাদামি রঙের কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। কলাচাষি রফিকুল ইসলাম একেকটি ব্যাগ খুলতেই বের হয়ে আসছিল সতেজ, সবুজ পরিষ্কার কলা। কলার গায়ে দাগ নেই, ধুলা নেই, পোকামাকড় নেই; নেই রোগবালাই।
কলা সংরক্ষণ ব্যাগের ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশারফ উদ্দিন বলেন , আম ও বেগুনের ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের সাফল্য থেকে কলা সংরক্ষণে ব্যাগিং প্রযুক্তি বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে নাটোরের এই বাগানে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই পরিষ্কার ও রোগমুক্ত কলা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কলার রং সুন্দর হচ্ছে। পাকা কলা পাঁচ থেকে সাত দিন ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিষমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ায় ক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন।
মোশারফ উদ্দিন বলেন, বাজারের অন্য কলার চেয়ে এই কলার চাহিদা বহুগুণ বেশি হবে। তা ছাড়া এই প্রক্রিয়ার কারণে কলা বিদেশে রপ্তানি করা সহজ হবে। কলার সব গুণ অটুট থাকায় বিদেশিদের কাছেও এ দেশের কলার চাহিদা থাকবে। সর্বোপরি কলার ব্যাগগুলো পরিবেশবান্ধব কাগজ দিয়ে তৈরি। এটা ছিঁড়ে না যাওয়া পর্যন্ত বহুবার ব্যবহার করা যাবে। ফলে কৃষকের খরচ কম পড়বে।
উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে কলাচাষিরা কলা সংগ্রহের তিন মাস আগে থেকে নিয়মিত কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি কলা বাজারে নিয়ে যাওয়ার দিনও তাঁরা কীটনাশক ছিটান। এতে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এখানকার মতো ব্যাগ ব্যবহার করা হলে কৃষকদের কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না। কলাচাষিরা প্রচুর খরচ থেকে বাঁচবেন। উৎপাদনে মুনাফা বেশি পাবেন। ক্রেতারাও বিশুদ্ধ কলা খেতে পারবেন।
মাঠ দিবসে উপস্থিত কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ব্যাগিং করতে হবে। ব্যাগটি নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। কলার কাঁদির পড়ার পরপরই ব্যাগিং শুরু করা যেতে পারে। ব্যাগিং করার তারিখ প্রতিটি গাছের পাশে লিখে রাখলে কলার পরিপক্বতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে এবং ব্যাগ খুলে কলা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সুত্রঃ প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম