কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টার্কি ও তিতির চাষ করে সফল হয়েছেন নওগাঁ জেলার পোলট্রি খামারী জিুল্লুর রহমান চৌধুরী। তার এ টার্কি ও তিতির খামারের কথা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসছেন তার বাণিজ্যিক খামার দেখতে। এ খামারের উৎপাদিত বাচ্চা চাহিদা এতটাই বেশী যে কমপক্ষে ২ মাসের আগাম ক্রেতার তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর ক্রেতাদের কাছে পর্যায়ক্রমে বাচ্চা সরবরাহ করা হয়।
নওগাঁ শহরের বিসিক সংলগ্ন শালুকা গ্রামে আল নাফি পাখি সংগ্রহশালা নামে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন জিল্লুর রহমান । তিনি দীর্ঘদিন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বসবাস করে নানারকম ব্যবসা বাণিজ্য করেন তিনি। ২০০২ সালে দেশে ফিরে এসে প্রথমে বয়লার চাতাল ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসায় কোনরকম সুযোগ সৃষ্টি করতে না পেরে পরবর্তীতে গরু এবং পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলেন। তাতেও তিনি কোন সাফল্য বয়ে আনতে পারেননি। অবশেষে ২০০৯ সালে আমেরিকায় দেখে আসা অপ্রচলিত টেকসই জাতের পাখি টার্কি চাষের কথা ভাবতে শুরু করেন। সেই ভাবনা থেকেই মাত্র ২২টি টার্কি দিয়েই টেকসই জাতের এই পাখির চাষ শুরু করেন তার খামারে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে পাখি। নিজেই বাচ্চা ফোটাতে শুরু করেন। পরবর্তীতে ইনকিউবেটর (বাচ্চা ফুটানোর মেশিন) স্থাপন করেন তার খামারে। পরবর্তীতে বাংলাদেশে চীনা মুরগী বলে খ্যাত তিতির চাষও শুরু করেন।
বর্তমানে তাার খামারে ৫শটি টার্কি’র প্যারেন্টস রয়েছে। প্রতিদিন তার এ খামার থেকে গ্রীষ্মকালে কমপক্ষে ৪শ ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে। শীতকালে এর পরিমাণ আরও বেশি হয়। টার্কি ২৭ থেকে ২৮ দিনে বাচ্চা প্রস্ফুটন করে। প্রতি মেয়াদে বাচ্চা হয় ৫শ’ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত। একদিন বয়সের প্রতিজোড়া বাচ্চা বিক্রি হয় ১ হাজার ৪শ টাকা। তার এ খামারে প্যারেন্টস তিতিরের সংখ্যা বর্তমানে ৫শ’। তিতিরের ডিম থেকে ২৫-২৬ দিনে বাচ্চা হয়। প্রতি মেয়াদে বাচ্চা উৎপাদিত হয় ২শ’ থেকে ২৫০টি। ১ দিন থেকে ১৫ দিন বয়সের প্রতিজোড়া বাচ্চা বিক্রি হয় ৫শ’ টাকা করে। এ ছাড়াও খাওয়ার উপযুক্ত টার্কিও বিক্রি করে থাকেন তিনি। ১০ মাস বয়সের একটি টার্কি থেকে প্রায় ১২ কেজি মাংস পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ৫শ’ টাকা হিসেবে একটি টার্কি বিক্রি হয় প্রায় ৬ হাজার টাকায়।
তার এ খামারে প্রতি মাসে টার্কি এবং তিতিরের জন্য প্রতিদিন খাওয়া খরচ হয় ২ হাজার ৫শ’ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিমাসে খাওয়া খরচ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা। ৪ জন শ্রমিক সার্বক্ষণিক এ খামারের দেখাশুনা করে। খাওয়া এবং তাদের বেতন বাবদ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে কেবলমাত্র টার্কি এবং তিতির থেকে মাসিক নীট আয় হয়ে থাকে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে তার অনেক স্বচ্ছলতা এসেছে। খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছে দেশজোড়া।
এ ছাড়াও তিনি এই খামারে সৌখিন অন্যান্য বিদেশী মূল্যবান পাখিরও চাষ করছেন। এখান থেকেও তিনি আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে লাভবার্ড, বাজুরিকা, ইন্দোনেশিয়া’র জাভা এবং বিদেশী ঘুঘু। এর মধ্যে লাভবার্ড খুবই লাভজনক । তিনি প্রথমে ৪০ জোড়া লাভবার্ড খামারে যুক্ত করেন। এ জন্য পুরো গোডাউন এসব পাখির জন্য আবাস তৈরি করেছেন। প্রতি জোড়া সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে ওই ৪০ জোড়া লাভবার্ড তিনি কিনেছিলেন মোট ৩ লাখ টাকায়। এরই মধ্যে তিনি প্রতি জোড়া ৮ হাজার টাকা করে ১শ’ জোড়া বিক্রি করেন ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। তারর খামারে এখনও ১শ’ জোড়া লাভবার্ড বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে প্রধান প্রফেসর মোঃ জালাল উদ্দিন জানান, জিল্লুর রহমান চৌধুরীর খামারে তিনি বহুবার গিয়েছেন। তার এ খামার ইতিমধ্যেই দেশের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। তিনি সফলতা পেয়েছেন বলা যায়। বাংলাদেশে একমাত্র তার খামারেই টার্কি এবং তিতিরের বাচ্চা ফোটানো হয়ে থাকে। এ কারণে এ খামারের চাহিদা খুবই বেশি।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম