কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আলু উৎপাদনে খ্যাত জয়পুরহাটের আলু এবার দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯ টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। দেশ গুলো হচ্ছে মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, নেপাল ও রাশিয়া। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। বীজ, সার ও কীটনাশকের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন হয়েছে ভাল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার আলু বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে । ফলে বাজারে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন স্থানীয় আলু চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জয়পুরহাটে ৪২ হাজার ৫শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর বেশি। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭শ’ মে: টন। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ৫টি ইউনিয়নে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে গ্রানোলা, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টোরিকস, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু চাষ হয়েছে। সেই সঙ্গে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে এখানকার আলু ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন স্থানিয় পাইকারি আলু ক্রেতারা। এছাড়া এখানকার আলু বর্তমানে প্যাকেট জাত করে মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, নেপাল ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
কালাই উপজেলাতে ৩০ থেকে ৩৫টি স্থানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মণ আলু কেনা-বেচা হচ্ছে। এ এখান কার বিভিন্ন জাতের আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর পাশাপাশি দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য আলু ব্যবসায়ীরা আলু কিনছেন বলে জানান। ফলে বাজারে আলুর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে এবং ভালো দাম পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় আলু চাষিরা। আবার স্থানিয় কোল্ড ষ্টোরেজ মালিকরা আলু রাখার জন্য বুকিং শুরু করেছেন। জেলার ১৫ টি কোল্ড ষ্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ মে: টন আলু রাখা সম্ভব হবে বলে জানায়, কৃষি বিভাগ।
উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের আলুচাষি আ: রাজ্জাক জানান, এবারে তিনি ৮০ শতক জমিতে মিউজিকা জাতের আলু চাষ করেছেন, সবমিলে তার উৎপাদনের খরচ হয় ২০ হাজার টাকা, প্রতি শতকে ৩ মণ হারে মোট আলু পেয়েছেন ২৪০ মণ । বিদেশী এক কোম্পানীর এজেন্ট এর কাছে তিনি ৩শ’ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমান লাভ টিকেছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা।
কালাই উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামে মালেশিয়ার মাসায়া কোম্পানীর আলু কেনার এজেন্ট গোলাম মোস্তফা জানান, মালেশিয়ার মাসায়া কোম্পানীর চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৩শ’ মণ করে বিভিন্ন জাতের আলু কিনতে হয়। এভাবে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আলু কিনবেন বলে জানান তিনি।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, এবারের বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধ সরবরাহসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলাতে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান আলুর বাজারে আলুর ভাল দাম পেয়ে কৃষকেরা অনেক খুশি, তাছাড়া এখানকার আলু বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় আলু চাষিরা আলুর ভাল দাম পাচ্ছেন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম