কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রংপুর সরকারি হাঁস-মুরগি খামারে ডিম ও একদিনের বাচ্চা উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলেও চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই বার্ষিক লক্ষ্যের চেয়ে ২০ হাজার বেশি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ডিম উৎপাদনে লক্ষ্য পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বাজারমূল্য স্বাভাবিক থাকা ও বার্ড ফ্লুর মতো মহামারী দমনে বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করায় খামারে বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন বেড়েছে।
খামার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর খামার এলাকায় ১০ একর জমির ওপর ১৯৫৮ সালে এ খামার গড়ে তোলা হয়। এতে বর্তমানে শুধু মুরগির বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন কার্যক্রম চলমান আছে। দেশীয় মুরগি থেকে এসব বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খামারে ১ লাখ ৯০ হাজার পিস লক্ষ্যের বিপরীতে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৬ পিস একদিনের বাচ্চা উৎপাদন হয়। মূলত ওই সময়ে বাজারে বাচ্চার দাম কম থাকায় উৎপাদনেও তার প্রভাব পড়ে। সরকারি খামারে উৎপাদিত প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ২০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গত অর্থবছরে বেসরকারি কোম্পানির মুরগির বাচ্চার দাম ৬ থেকে ৮ টাকা কম ছিল।
তবে চলতি অর্থবছরে মুরগির বাচ্চার বাজার বেশ চাঙ্গা রয়েছে। বর্তমানে বেসরকারিভাবে উৎপাদিত মুরগির বাচ্চা ২২ থেকে ২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে সরকারিভাবে উৎপাদিত বাচ্চার চাহিদা বেড়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে দুই লাখ পিস লক্ষ্যের বিপরীতে আট মাসেই ২ লাখ ২০ হাজার পিস বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। এই সময়ে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৯১ পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য ডিম উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস। অর্থবছরের বাকি সময়ের মধ্যে সহজেই এ লক্ষ্য পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা জানান, উৎপাদন বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো রোগ-বালাই দমনে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা গ্রহণ। সাধারণত প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত মুরগি বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম বার্ড ফ্লু। বায়ো সিকিউরিটি ব্যবস্থা জোরদার করায় গত ছয় বছর ধরে খামারে মুরগির রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কমেছে। এতে বার্ড ফ্লুও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের জীবাণু বহনের কারণে হাঁস-সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাঁস-মুরগি খামারের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে প্রবেশ করার সময় জুতা-স্যান্ডেল জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে পরিশোধন করতে হচ্ছে। এছাড়া খামারের ভেতরে বিভিন্ন ধাপে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুরগি রাখার শেডে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারি হাঁস-মুরগি খামারে দেশী মুরগির উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য এ খামারে সোনালি জাতের মুরগি উৎপাদন করা হচ্ছে। ফাওমি জাতের লেয়ার এবং আরআইআর জাতের মোরগের ক্রসের মাধ্যমে এ মুরগি উৎপাদন করা হয়। সাড়ে পাঁচ মাস বয়স থেকে সোনালি মুরগি ডিম দেয়া শুরু করে। প্রতিটি মুরগি বছরে ১৮০ থেকে ২২০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।
রংপুর হাঁস-মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ ডা. জিতেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, দেশী মুরগির উৎপাদন ঠিক রাখতে সরকারি খামার কাজ করছে। বেসরকারি হ্যাচারিতে উৎপাদিত একদিনের মুরগির বাচ্চার বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি। তাই চলতি বছর লক্ষ্যের চেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে এবং ডিম উৎপাদনও লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে খামারে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত সব মুরগি মেরে ফেলতে হয়েছিল। নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হয়েছে। এর পর থেকে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে খামারে ডিমপাড়া মুরগি আছে আড়াই হাজার। এছাড়া সরকারিভাবে বাচ্চা ফুটানোর হার শতকরা ৭৫ ভাগ হলেও আমরা তা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/ এম ইসলাম