বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান: আম সকল ফলের সেরা। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র আম গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচা আম লবন-মরিচ দিয়ে মেখে খেতে এবং পাকা আম দুধ দিয়ে খেখে ভারী মজা। তাছাড়া কাঁচা ও পাকা অবস্থায় আম থেকে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য সামগ্রী যেমন-ফালি, আচার, চাটনি, মোরব্বা ইত্যাদি তৈরী করা হয়। কাচা আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও পাকা আমে ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন থাকে। আম গাছের কাঠ গৃহ নির্মান, আসবাবপত্র ও জালানী কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আমের রোগবালাই আম চাষের একটি অন্যতম প্রতিবন্ধক। এব ফলে আমের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয়। আমের রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে আমের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমের কয়েকটি প্রধান মারাত্মক রোগ সম্পর্কে বর্নণা করা হল।
রোগের নাম: ফোস্কা রোগ বা এ্যানথ্রাকনোজ (Anthracnose)
রোগের কারণ: কলিটোট্রিকাম গ্লোওস্পোরোয়ডিস (Colletotrichum gloeosporioides) নামক ছত্রাক।
রোগের লক্ষন : গাছের পাতা, পাতার বোটা, কচি ডাল, কান্ড, মুকুল ও ফলে এ রোগ দেখা যায়। প্রথমে পাতা ও কচি ডালে ছোট ছোট অসম আকৃতির ধূসর বাদামী রংয়ের দাগ পড়ে। দাগগুলো ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং কয়েকটি দাগ একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। কচি পাতাই বেশী মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় এবং কচি ডাল আগা হতে শুকিয়ে যেতে থাকে। পাতার বোটা আক্রান্ত হলে উহা কালো হয়ে ঝরে পড়ে। পাতার বোটা থেকে রোগ ডালে সংক্রমিত হয় এবং ডালের গায়ে কালো দাগ উৎপন্ন হয়। মুকুল বা ফুল আক্রান্ত হলে উহা কালো হয়ে ঝরে পড়ে এবং পুষ্পদন্ড শুকিয়ে যায়। ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে কালো কালো দাগ দেখা যায়। এ অবস্থায় আম ঝরে পড়ে। বড় আমও আক্রান্ত হয়ে থাকে। আমের গায়ে ধূসর বাদামী বা কালো দাগ দেখা যায়। অনেক সময় আক্রান্ত অংশ ফেটে যায় ও ক্ষতের সৃষ্টি করে। এ রোগের আক্রমনে সম্পূর্ন আমটি পচে যেতে পারে।
প্রতিকার : রোগ প্রতিরোধী জাতের আম চাষ করতে হবে। আম্রপালী, নিলাম্বরী ইত্যাদি জাতে এই রোগ কম হয়। আম সংগ্রহের পর গাছের মরা ডাল কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং কাটা অংশে বর্দোপেষ্ট (প্রতি লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন) লাগাতে হবে। গাছের নীচে পড়ে থাকা মরাপাতাসহ যাবতীয় পরিত্যক্ত অংশ কিছুদিন পর পর সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বে টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালভাবে ভিজিয়ে একবার স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মার্বেল আকার ধারণ করলে উপরোক্ত ঔষধ আরও একবার স্প্রে করতে হবে। আম সংগ্রহের পর ফাটা, কাটা, ক্ষত আম সরিয়ে ফেলতে হবে। আম সংগ্রহ করে গরম পানিতে (৫২০ ঈ তাপমাত্রায় ১০ মিনিট) ডুবিয়ে রাখার পর খোলা বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব) মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
কৃপ্র/এম ইসলাম