কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গাড়ারণ গ্রামে প্রায় দেড় একর আয়তনের একটি জলাশয় ছিল। এক যুগ আগেও জলাশয়টি ছিল জলপূর্ণ। ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করতেন গ্রামের মত্স্যচাষীরা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে জলাশয়টি ভরাট করে দখলে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। বর্তমানে জলাশয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। পরিবর্তে সেখানে রয়েছে ধু-ধু মাঠ। শুধু এ জলাশয়ই নয়। ইজারা তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণে এভাবে অবাধে দখল হয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের বহু জলাশয়।
শ্রীপুর উপজেলা মত্স্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট খাস জলাশয়ের সংখ্যা ১৯১। প্রতি বছরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব জলাশয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ বাদ রেখে ইজারা দেয়া হয়। আর ইজারা থেকে বাদ পড়া জলাশয়গুলোই ভূমিদস্যুদের দখলবাজির শিকার হয়। জলাশয়ের জমিতে তৈরি হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা। আর স্থানীয় মত্স্যচাষীরা জানান, নিয়মিত ইজারা দেয়া হলেও দখল হওয়া জলাশয়গুলো ইজারা তালিকার বাইরে রাখা হয়। এতে ভূমিদস্যুদের সুযোগ আরো বেড়ে যায়।
জানা যায়, শ্রীপুর পৌর শহরের মিজানুর রহমান খান মহিলা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পাশে এক একর জমির একটি জলাশয় ছিল। দুই বছর আগে ওই জলাশয়ও দখল করা হয়েছে। আর এটি দখলের অভিযোগ রয়েছে খোদ কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এভাবে একের পর এক জলাশয় দখল করে ফেলছে ভূমিদস্যুরা। আর এ কাজে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ এলাকার স্ট্যান্ডার্ড শিল্প গ্রুপ প্রায় তিন একর জমির জলাশয় দখল করে নিয়েছে। চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জলাশয়টিকে কারখানার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন চলছে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ।
এছাড়া গাজীপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজার এলাকায় এক একর জমির একটি জলাশয় দখল করে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। পাড় কেটে মাটি ভরাট করে জলাশয়টির পরিসর এরই মধ্যে ছোট করে ফেলা হয়েছে। প্রকাশ্যে দখল চলছে মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের প্রায় দেড় একর জমির জলাশয়। স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী চক্র জলাশয়ের পাড় থেকে কয়েকশ পুরনো গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এ জলাশয়ের পাড়ে প্রায় ১০০ বছর ধরে বসবাস করছেন ভূমিহীন ২২টি পরিবার। দখলদার চক্রটি এখন তাদেরও উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে বরমী ইউনিয়নের বরামা গ্রামে দখল হয়ে যাচ্ছে আরো একটি জলাশয়। জানা যায়, কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী জলাশয়টি ভাগ করে নিয়েছেন। আর সর্বশেষ প্রায় এক সপ্তাহ আগে ফকির শিল্প গ্রুপের মালিক ফকির মো. মনিরুজ্জামান শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের ৩ দশমিক ৫২ একর জমির একটি জলাশয় দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জলাশয় দখল বিষয়ে স্থানীয় মাছচাষীরা জানান, শ্রীপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে এখন দেশী প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। অথচ জলাশয়গুলো ভরাট হওয়ার আগে এগুলো থেকে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তারা দাবি করেন, দখল হয়ে যাওয়া জলাশয়গুলো উদ্ধার করে সহজ শর্তে প্রকৃত মত্স্যজীবীদের ইজারা দেয়া হলে মাছের এ সংকট দূর করা সম্ভব। জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার হলে দেশী মাছের উত্পাদন বাড়বে বলে জানান শ্রীপুর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা এমদাদুল হকও।
এ বিষয়ে কথা হলে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা বলেন, ‘উপজেলার প্রায় অর্ধেক জলাশয় মাছ চাষের অনুপযোগী। জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, সংরক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে মোট সংখ্যার একটি বড় অংশ ইজারা থেকে বাদ রাখা হয়।’ আর দখলবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দখলবাজির অভিযোগ পেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়ে থাকে।’
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম