কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাগুরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চফলনশীল বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজের চাষ। এ বীজ সংগ্রহ ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে মাগুরার কৃষকরা। এ জাতের পেঁয়াজের বীজ চাষ মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামীতে বীজের সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি এটির উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার মোট ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরা সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, শ্রীপুরে ২০ হেক্টর, শালিখায় ৫ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ বীজ।
কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, উচ্চফলনশীল বারি পেঁয়াজ-১ জাতটি স্থানীয় কৃষকদের কাছে তাহেরপুরি নামে পরিচিত। শীত মৌসুমের অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বীজ সংগ্রহের জন্য এ জাতের পেঁয়াজ রোপণ করতে হয়। জমিতে রোপণের পর ১৫০ থেকে ১৬০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজ সংগ্রহের পর কৃষকরা একই জমি থেকে বীজের জন্য লাগানো পেঁয়াজ উঠিয়ে তা বাজারে বিক্রি পারেন। এ জাতের বীজে স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন বেশি হয় এবং চিটা কম হয়। এ কারণে কৃষকদের কাছে এ বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, এ জাতের ১ কেজি বীজে প্রায় ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা যায়। যা স্থানীয় জাতের বীজের তুলানায় প্রায় দিগুণ। এ বছর বারি-১ জাতের বীজও ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ জাতের প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজর ৫’শ টাকা পর্যন্ত । এ বছরও পেঁয়াজের বীজ ভালো হয়েছে। আগামী মৌসুমে বীজের ভালো দাম পাবেন আশা করছেন বলে কৃষকরা।
মাগুরার সদর উপজেলার বাঁশকোঠা গ্রামে বারি-১ পেঁয়াজ চাষ করা কৃষক লিটন ঘোষ জানান, বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজ বিক্রি ও সংগ্রহ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ বছর তিনি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রর সহযোগিতায় ৭০ শতক জমিতে বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন। যেখান থেকে প্রায় ১৫০ কোজি বীজ পাওয়া যাবে। আগামী মৌসুমে প্রতি কেজি বীজ প্রায় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বাজার দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
মহম্মদপুর উপজেলার রোনগর গ্রামের কৃষক ই মোল্যা প্রায় ৫০ শতক জমিতে বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজের চাষ চাষ করেছেন। যা থেকে প্রায় ১২০ কেজি বীজ উৎপাদিত হবে। তিনিও ভালো দামে বীজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষেণা কেন্দ্রর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, বারি-১ জাতের পেঁয়াজ কৃষক পর্যায়ে ইতিমধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সাধারণ জাতের পেঁয়াজ বীজে যেখানে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের ফলন হচ্ছে ৬ থেকে ৭ টন, সেখানে বারি-১ জাতে বীজে হেক্টর প্রতি ফলন হয় ১০ থেকে ১২ টন। যা সাধারণ জাতের তুনায় প্রায় দুইগুণ। এটির রঙ, স্বাদ ও গন্ধ স্থানীয় জাতের পেঁয়াজের মতই। এ বীজ সংগ্রহএবং চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এ কারণে এটির চাষ কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। বারি-১ ছাড়াও মাগুরাতে কিছু এলাকায় শীতকালীন বারি পেঁয়াজ-৪ উচ্চফলনশীল জাতের বীজের চাষ হয়েছে। এটিসহ শীত ও গ্রীষ্ম উভায় মৌসুমে চাষযোগ্য উচ্চফলনশীল বারি পেঁয়াজ ৩ এবং বারি পেঁয়াজ ৫ জাতের বীজ চাষ সংগ্রহ ও চাষের বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, চলতি মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বারি-১ জাতের চাষে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু জমিতে শীতকালীন বারি পেঁয়াজ-৪ উচ্চফলনশীল জাতের বীজের চাষও হয়েছে। মাঠে ফলনের অবস্থা ভালো। এ বীজ আগামী মৌসুমে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়তে ভূমিকা রাখবে ।এছাড়া ভালো দামে এ বীজ বিক্রি করতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম