কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : দেশের কৃষিতে নতুন এক প্রযুক্তি চালু হয়েছে, যা কয়েক বছর ধরে বহার করে ব্যাপক সুফল পেয়েছেন কৃষকরা। প্রযুক্তিটির নাম মাটির গভীরে ইউরিয়া প্রয়োগ প্রযুক্তি বা গুটি ইউরিয়া প্রযোগ প্রযুক্তি ।এটি প্রায় ২০ বছর আগে চালু হলেও গত ৫ বছর ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ ২২টি জেলায় ব্যাপকভাবে কৃষকরা ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন।
গুটি ইউরিয়া কোনো নতুন সার নয়। এটি গুঁড়া ইউরিয়া সারেরই রূপান্তর। বাংলাদেশেই উদ্ভাবিত একটি মেশিনের (ব্রিকেট মেশিন) মাধ্যমে গুটি ইউরিয়া সহজেই তৈরি করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে দুই সাইজের গুটি ইউরিয়া তৈরি করা হয়। আউশ ও আমন মৌসুমের জন্য ১.৮ গ্রাম এবং বোরো মৌসুমের জন্য ২.৭ গ্রাম ওজনের গুটি। গুটি ইউরিয়ায় গুঁড়া ইউরিয়ার মতোই ৪৬ ভাগ নাইট্রোজেন বিদ্যমান।
গুটি ইউরিয়া বাজারে প্রচলিত গুঁড়া ইউরিয়ার তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক। কারণ গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে ধানের ফলন ১৫-২৫% বৃদ্ধি পায়, ইউরিয়া সার তিন ভাগের এক ভাগ লাগে তথা ২০-২৫% খরচ সাশ্রয় হয় এবং আগাছা দমনের খরচ ৩০-৫০% ভাগ কমে যায়। এক হেক্টর জমিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে ধানের ফলন অন্তত ১০০০ কেজি বাড়ে।
গুটি ইউরিয়া প্রতি হেক্টরে আউশ আমন ধানে মাত্র ১১২ কেজি এবং উফশী বোরো ধানে ১৭০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ফার্টিলাইজার গাইড ২০১২ অনুযায়ী গুঁড়া ইউরিয়া আউশ ও আমন ধানে অন্তত প্রতি হেক্টরে গড়ে ২০০ কেজি ও বোরো ধানে ৪৩৪ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। বোরো ধানে যদি ৪০০ কেজি গুঁড়া ইউরিয়াও প্রয়োগ করা হয় তাহলে কৃষকের খরচ পড়বে ৬৪০০ টাকা (প্রতি কেজি ১৬ টাকা করে) অথচ গুটি ইউরিয়া ১৭০ কেজি প্রদানে খরচ পড়ে মাত্র ৩০৬০ টাকা (প্রতি কেজি ১৮ টাকা করে)।
গুটি ইউরিয়ার উপকারিতা : গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের উপকারিতা অনেক। গুটি ইউরিয়া একবার প্রয়োগ করলেই চলে, ধান পাকা পর্যন্ত আর প্রয়োগ করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া ব্যবহৃত জমিতে ঘাস বা আগাছা কম হয়। খড়ে পুষ্টিমান বেশি থাকে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। গুটি ইউরিয়া গুঁড়া ইউরিয়ার মতো বাতাসে উবে যায় না, মাটির গভীরে চুইয়ে অপচয় হয় না এবং পানির সাথে বিলে বা নদী-নালায় চলে যায় না। ফলে পরিবেশ ভালো থাকে। সার কম লাগে বিধায় ভরা মৌসুমে সারের অভাব থাকে না। ইউরিয়া সার ২০-২৫% কম লাগে এবং ধানের ফলন ১৫-২৫% বৃদ্ধি পায়।
গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ পদ্ধতি : গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের পূর্বশর্ত হচ্ছে লাইনে চারা রোপণ। চারা রোপণের ৭ দিনের মধ্যে মাটি শক্ত হওয়ার আগে জমিতে ২-৩ সেমি. পানি থাকা অবস্থায় গুটি ইউরিয়া মাটির ৩-৪ ইঞ্চি নিচে প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে ২০×২০ সেমি. (৮×৮ ) দূরত্বে লাইন থেকে লাইন এবং চারা থেকে চারার দূরত্বে ধানের চারা বোপণ করতে হবে। এরপর প্রতি চার গোছার মাঝখানে একটি করে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। গুটি ইউরিয়া হাতেও প্রয়োগ করা যায়। তাছাড়া বারি ও আইএফডিসি উদ্ভাবিত প্রয়োগ যন্ত্র দিয়েও প্রয়োগ করা যায়।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে দেশ ও কৃষক অনেক লাভবান হচ্ছে। ইউরিয়া ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় ইউরিয়া সার সাশ্রয় হচ্ছে ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সার আমদানি ও চাল আমদানি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।
কৃপ্র/কে আহমেদ/ এম ইসলাম