কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরগুনা জেলার উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পরিবেশ বিপর্যয়ে নারিকেলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষি বিভাগ নিয়মিত দ্রুত ও উচ্চ ফলনশীল বামনাকৃতির নারিকেল চারা বিপণন করছে। স্থানীয়রা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে নারিকেল গাছ ও নারিকেলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণে এ অঞ্চলের নারিকেল গাছ বিস্তারে বাধা পাচ্ছে।
পোকা-মাকড় প্রথমে নারিকেল গাছের কচি পাতা ও নারিকেলের বোঁটার পাশের চাকতির নিচে বাসা বাঁধে। পরে কচি ডাবের নরম অংশে ক্ষত তৈরি করে এবং রস চুষে খায়। ফলে নারিকেল গাছের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, কালো দাগ পড়া, আকারে ছোট হওয়াসহ ভেতরের শাঁসের পরিমাণ কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কচি ডাব গাছ থেকে ঝরে পড়ে। এসব কারণে দিন দিন নারিকেলের আকার ছোট ও বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছে আবার ফলও ধরছে না। বয়স্ক হওয়ার আগেই গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।
চাওড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা মিয়া জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও তাদের নারিকেল গাছের বাগান থেকে প্রচুর আয় হতো। কিন্তু এখন নারিকেল ধরছে না। এ অঞ্চলে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে নারিকেলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। জলবাযূ পরিবর্তন বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী একটি উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না জানান, প্রকৃতির বৈরি আচরণ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় জনপদের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের সবুজ বেষ্টনী দ্বিতীয় প্রাচীর হিসেবে ভূমিকা রাখতো। আগের সেই অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিশেষভাবে মূল্যায়িত এই নারিকেল গাছ রোগবালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের সিনিয়র অফিসার কৃষিবিদ এস এম বদরুল আলম জানান, নারিকেল গাছের রোগবালাই নিরাময়ে আমরা কৃষক ও গাছ মালিকদের সাথে নিয়মিতই পরামর্শ সভা করে আসছি। নারিকেল গাছ বৃদ্ধিতে কৃষিমেলা থেকে নারিকেল চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্প ভিত্তিক স্থানীয় মানুষের কাছে ভিয়েতনাম ও কেরালা থেকে আমদানি করা উচ্চ ও দ্রুত ফলনশীল বামনাকৃতির নারকেল গাছের চারা বিক্রয় করা হচ্ছে। পূর্ণ বয়স্ক হলে ৫ থেকে সাত ফুট উচ্চতার এই গাছটিতে মাত্র তিন বছরে ফলন আসে। একটি গাছ থেকে বছরে একশ’র বেশী নারিকেল পাওয়া পায়।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম