কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন : প্রচলিত খামারে উৎপন্ন ফসল অপেক্ষা উলম্ব খামারে উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ হয় বহুগুণ। ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। কৃষিতে এটি একটি নতুন ধারণা। জমি কমছে মানুষ বাড়ছে। ফলে ফসলি জমির এরিয়া বাড়ানোর সুযোগ সীমিত কিন্তু ওপরের দিকে বা উলম্বভাবে বাড়াতে তো বাধা নেই! আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি নতুন ধারণা হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই এটি এখন বাস্তবতা।
বাণিজ্যিক উলম্ব খামার খুব বেশি বছর আগে নির্মিত হয়নি। ১৯৫১ সালের আগে আর্মেনিয়ায় সুউচ্চ স্থাপনায় বাণিজ্যিকভাবে উলম্ব খামারে নির্মিত হয়েছিল। উলম্ব খামারে ফসল চাষাবাদের একটি ছবি ১৯০৯ সালে সাময়িক পত্রিকা টাইম ম্যাগজিনে ছাপা হয়েছিল। এই ছবিটিই পরে অনেককেই উলম্ব খামার নির্মাণে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল। বর্তমানে কৃষিবিজ্ঞানী, স্থাপত্যবিদ, বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাপী উলম্ব খামারের ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে ভার্টিকাল ফার্মিং এর উপযোগিতা
জনসংখ্যার অনুপাতে আয়তনে বাংলাদেশ খুবই ছোট একটি দেশ। এ দেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে বিগত ২০ বছরেই কৃষি জমি কমেছে ১১,৪৫,০০০ (এগারো লাখ পয়তালি্লশ হাজার) হেক্টর। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলাপর্যায়ে পরিত্যক্ত অনাবাদি এবং আবাদি জমিতে এরূপ খামার স্থাপন করা যায়।
প্রকৃতপক্ষে, একই জমির ওপর বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে অধিক পরিমাণে খাদ্যোৎপাদন করাই এরূপ খামারের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তাছাড়া এরূপ খামারের ভেতরেই আবাসনের ব্যবস্থা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করা যায়। ফলে আবাসনের জন্য আলাদা জমির কোনো দরকার হয় না। তাই আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।
ভূমির পরিমাণ কম থাকার কারণে বাংলাদশের জমির মূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই উলম্ব খামার নির্মাণ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে একটি বিকল্প উপায়। এ পদ্ধতিতে খামার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খুবই সহজ। এ খামারে চাষাবাদ করা পরিবেশগতভাবে সুবিধাজনক এবং পরিবেশ অতি অল্পমাত্রায় দূষণ করে। উলম্ব পদ্ধতির খামার হলো স্থাপনার ভেতর সুরক্ষিত পরিবেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সূর্যালোকের সহায়তায় সারাবছর চাষাবাদ করা।
কৃপ্র/ এম ইসলাম