কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ব্যবহার শেষে ভোক্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য (ই-বর্জ্য) ফেরত দেয়ার বিধান রেখে নতুন বিধিমালা জারি করতে যাচ্ছে সরকার। বিধিমালা লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে রাখা হচ্ছে দুই বছর কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধানও। বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার কার্যক্রমও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে তা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শুধু ভোক্তা নয়, বিধিমালার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে প্রস্তুত ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোসহ মজুদকারী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও। বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিক্রির সময়ই ভোক্তার কাছ থেকে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য (ই-বর্জ্য) ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন প্রস্তুত ও সংযোজনকারক। রি-সাইকেলের জন্য এসব ই-বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকবেন মজুদকারী, ব্যবসায়ী বা স্থানীয় দোকানদার। এদের পরিচালনাধীন সংগ্রহ কেন্দ্র পর্যন্ত ই-বর্জ্য জমা দেয়ার দায়িত্ব থাকবে ভোক্তাদের।
বিধিমালায় ই-বর্জ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাল্ব, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, এটিএম বুথের টাকা উত্তোলন যন্ত্র, কোমল পানীয় বিক্রির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, তাপ নিয়ন্ত্রক, ধোঁয়া নির্বাপক, এমনকি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বাদ্যযন্ত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৭’ শীর্ষক বিধিমালাটি চূড়ান্ত করে এরই মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বিধিমালার ২৩ (৩) ধারা অনুযায়ী, নিবন্ধিত ব্যবসায়ী বা সংগ্রহ কেন্দ্রে ই-বর্জ্য জমা দেয়ার জন্য ভোক্তারাই দায়ী থাকবেন। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বিধি লঙ্ঘনের জন্য আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জরিমানা প্রদানে বাধ্য থাকবেন ভোক্তারা। এখানে ভোক্তা বলতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধরনের ব্যবহারকারীকেই বোঝানো হয়েছে। ই-পণ্য নির্ধারিত সংগ্রহ কেন্দ্রে জমা দিতে বাধ্য থাকবে যেকোনো অফিস, সরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানও। অন্যথায় এদেরকেও সাজা পেতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করেই বিধিমালার খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিধিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে গত মাসেই। এতে কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ই তা করতে পারবে।
বিধিমালায় ই-পণ্য বিক্রির সময়ই ক্রেতার কাছ থেকে মূল্যের একাংশ জামানত হিসেবে জমা রাখার বিধান রাখা হচ্ছে। ই-বর্জ্য ফেরত দিয়ে সুদসমেত জামানতের অর্থ ফেরত নিয়ে যাবেন ভোক্তারা। এ নিয়ে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, ই-পণ্য বিক্রির সময়ই ভোক্তার কাছ থেকে মূল্যের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম অর্থ জমা রাখবেন উৎপাদন ও সংযোজনকারীরা। ব্যবহার শেষে ফেলে না দিয়ে ওই পণ্য সংগ্রহকারী বা দোকানদারের মাধ্যমে জমা দেবেন ভোক্তা। জমা দেয়ার সময় ভোক্তা ই-পণ্যের মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত যে অর্থ জমা দিয়েছিলেন, তা সুদসহ ফেরত পাবেন। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, ভোক্তার কাছ থেকে ই-বর্জ্য সংগ্রহের পর সংগ্রহ বা মজুদকারী তা চূর্ণকারীর কাছে পাঠাবেন। সেখান থেকে তা চলে যাবে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীর কাছে।
এছাড়া পুরনো ই-পণ্য মেরামতকারীদের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নিবন্ধন গ্রহণের বিষয়টিও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বিধিমালায়। একই সঙ্গে ই-বর্জ্য সংগ্রহ, মজুদ, চূর্ণকরণ, পরিবহন ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিতে হবে। এগুলোর প্রতিটিকেই নিজ নিজ কাজ সম্পাদন করতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী। এছাড়া ই-বর্জ্যের মজুদাগার বা চূর্ণ করার প্লান্ট— কোনোটিই কোনো ধরনের জলাভূমির কাছাকাছি হতে পারবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিধিমালায়।
বিধিমালার নিয়ম অনুযায়ী, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার আগে কোনো স্তরেই ই-বর্জ্য ১২০ দিনের বেশি মজুদ রাখা যাবে না। তবে মজুদকরণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে আরো ৯০ দিন মজুদ রাখা যাবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম