কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভোলা জেলার সাগরমোহনার চরাঞ্চলগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর্থিকভাবে মাছের চেয়ে লাভবান হওয়ায় বাড়ছে খামার এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া শিকারের সংখ্যা। কাঁকড়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ। কাঁকড়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই। তবে পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা পেলে কাঁকড়া রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার মানুষ।
স্থানীয় কাঁকড়া চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে-বিদেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার ছোট-বড় শতাধিক খামারে কাঁকড়া চাষ শুরু হয়েছে। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভজনক হওয়ায় উপকূলীয় এ অঞ্চলে কাঁকড়ার চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাছ চাষের অনুপযোগী ১ হেক্টর এলাকায় কাঁকড়ার চাষ করে বছরে প্রায় তিন লাখ টাকার মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে দেখে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। স্থানীয়দের হিসেব অনুযায়ী, ভোলা থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭শ’ কেজি কাঁকড়া ঢাকায় যায় এবং এর বেশির ভাগই বিদেশে রফতানি করা হয়।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা সর্ব দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন সাগর মোহনার দ্বীপ কুকরি মুকরির কাঁকড়া চাষি খলিলুর রহমান জানান, শীতের সময় ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কাঁকড়া শিকার বেছে নিয়েছেন জেলেরা। খাল বিলের পানি কমে যাওয়ায় নভেম্বর মাস থেকে মনপুরা, ঢালচর ও চর কুকরী-মুকরীসহ সাগরমোহনার ডুবোচর ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন চার হাজারেরও বেশি জেলে কাঁকড়া শিকার করেন। আর এসব কাঁকড়া ধরে চাষিদের খামারে সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। এসব কাঁকড়ার আকার ভেদে ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেন তারা। তিনি আরো জানান, শুধু মাত্র তার খামারেই অন্তত আড়াই হাজার জেলে কাঁকড়া শিকার করে বিক্রি করেন।
খলিলুর রহমানের কাঁকড়া খামারে কর্মরত শ্রমিক মো. জামাল হোসেন জানান, ভোলার উপকূলে ছোট-বড় শতাধিক কাঁকড়া খামারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আরও এক হাজারেরও বেশি মানুষের। তারাও এখন সংসারে অভাব দূর করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
লাভজনক ও সম্ভাবনাময় হওয়ায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কাঁকড়া চাষে এগিয়ে আসার দাবি কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজনের। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরে কাঁকড়ার ৪৭টি খামার প্রদর্শনী ও ১০০ জনকে কাঁকড়া চাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম