কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় সতেজতা ফিরেছে সিলেটের চা বাগানগুলোয়। গাছের রুক্ষতা দূর হয়ে ফিরেছে সজীবতা। আর এ আগাম বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাগানগুলোয় শুরু হয়েছে উত্পাদন প্রক্রিয়া। সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মার্চের শেষ দিকে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা চা-শিল্পের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৬২টি চা-বাগানের মধ্যে সিলেটেই রয়েছে ১৩১টি। এসব বাগানের ১ দশমিক ২ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টরে চা চাষ হয়। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, কয়েক বছর ধরেই দেশে চা উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ চা-বাগানে কৃত্রিম সেচ সুবিধার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের বাগানগুলোর সব ক’টিই পাহাড়ি ভূমিতে। ফলে এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনও সম্ভব হয় না। তাছাড়া বাগানের ভেতরে খাল ও ছড়ার মতো প্রাকৃতিক পানির উত্সগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চা উত্পাদনের জন্য এ সময়ের বৃষ্টি খুবই প্রয়োজনীয় ও উপকারী।’
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টি না হলে চা পাতা লালচে হয়ে যায়। লাল মাকড়সার আক্রমণসহ নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দেয়। এতে উত্পাদনে ধস নামে। এ বছরেও এরই মধ্যে কয়েকটি বাগানে লাল মাকড়সার আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। তবে আশা করা হচ্ছে, এ আগাম বৃষ্টি মাকড়সা তাড়াতে সক্ষম হবে। কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতি বছর চা বাগানের মোট ভূমির আড়াই শতাংশে চা উত্পাদন বৃদ্ধি করার শর্ত রয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে অনেক সময়ই তা সম্ভব হয় না। দেখা যায়, শ্রমিকরা চা গাছ ট্রিমিং (গাছের আগা সমান করা) করছেন। শ্রমিকরা জানান, এরপরই শুরু হবে প্লাকিং।
লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন বলেন, ‘চা উত্পাদন অনেকটাই বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। এ বছর আগেভাগে বৃষ্টি নামায় উত্পাদনও আগেভাগে শুরু হয়েছে।’ তবে উত্পাদন বাড়াতে তিনি কেবল প্রকৃতির ওপর নির্ভর না থেকে বাগান ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। সিলেটের শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ জানান, এ সময়ের বৃষ্টি চা-শিল্পের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষত পাঁচ বছরের কম বয়সী গাছের জন্য বৃষ্টি খুবই দরকারি।
সিলেটের খাদিম চা বাগানের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘এর আগে বৃষ্টিহীনতার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, এ বৃষ্টি তা অনেকটাই পুষিয়ে দিতে সক্ষম হবে।’ কেবল সিলেটই নয়; হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোয়ও স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে এ আগাম বৃষ্টি। এ বিষয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ বলেন, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মাসের শেষ দিকে আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে চা-বাগানগুলোয়।