কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বগুড়ায় দিন দিন বাড়ছে বাড়ির ছাদে বাগান ও শাকসবজি চাষ উৎপাদিত শাকসবজি দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন অনেকে। আর এ ছাদ কৃষিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির ছাদে টমেটো, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শসা, লালশাক, মরিচ, পুঁইশাক, বেগুন, ঢেঁড়স, রসুন, পেঁয়াজ, শিম ইত্যাদি শাকসবজির চাষ হচ্ছে।
জেলার মালতিনগর, বকশিবাজার, ঠনঠনিয়া, ফুলতলা, তেঁতুলতলা, জলেশ্বরীতলা, সূত্রাপুর, কাটনারপাড়া, সুলতানগঞ্জপাড়ায় এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাদে সবজি চাষে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে আদমদীঘি উপজেলা। এ উপজেলার অনেক বাসিন্দা শখের বশে ছাদে সবজি চাষ শুরু করলেও এখন তারা নিয়মিত এ প্রক্রিয়ায় শাকসবজি উৎপাদন করছেন। ধীরে ধীরে আশপাশের এলাকাতেও এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
শিববাটি এলাকার মো. আবু সাইদ অরুণ বলেন, ছাদের বাগানের কিছু অংশজুড়ে সবজির চাষ করেছি। উৎপাদিত সবজি পরিবারের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। আর বাগানে গাছ তৈরি করে সেগুলো নার্সারিতে বিক্রি করি। এতে বাড়তি টাকা আয় করা যায়।
শহরের মালতিনগরের বাদল চৌধুরী বলেন, প্রথমে শখের বশে ছাদে সবজি চাষ করি। পরে মনে হলো এ উপায়ে পরিবারের জন্য সবজির জোগান দেয়া যায়। এজন্য এবার টমেটো, বেগুন, শিম ও মরিচ চাষ করেছি। ফলে বাজার থেকে আর শিম কিনতে হয়নি। ছাদে এখন প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড ও দেশীয় জাতের টমেটোর ফলন হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে টমেটো সংগ্রহ করে পরিবারের জন্য রান্না হয়ে থাকে।
আদমদীঘি উপজেলা সদরের হাজি তাছের আহম্মদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা আহমেদ নাইডু প্রায় ৫ বছর ধরে মৌসুম অনুযায়ী বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি বলেন, এসব সবজি নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজন মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে থাকি। এখন ছাদে লালশাক, পালংশাক, শিম, কুমড়া, লাউ, লেবু, পেঁয়াজ, শসা, বেগুন, মরিচ, টমেটো, ডালিম, লেবু ও পেয়ারাসহ হরেক রকম সবজি ও ফল চাষ করছি।
তিনি আরো জানান, এ অঞ্চলে যে হারে মিল-কারখানা ও বসতবাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, তাতে এক সময় ফসলি জমি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই বাড়ির ছাদে সবজি চাষ এ সংকট মোকাবেলায় ভালো সমাধান হতে পারে। উন্নত প্রযুক্তি ও পরামর্শ পেলে ফলন আরো ভালো হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ছাদে সবজি চাষে আগ্রহী ব্যক্তি ও বাড়ির মালিকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে পুষ্টিমান বজায় রাখা যায়। ভালো ও কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষে শহুরে মানুষের মাঝে আগ্রহ দেখা গেছে। তাই ছাদ ফেলে না রেখে অনেকেই সবজি চাষে ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ছাদে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানো যায়। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এরই মধ্যে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের ওপর উপজেলার প্রায় ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আগামীতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের ওপর আরেকটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, মূলত নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি পাওয়ার ইচ্ছা থেকেই বাড়ির ছাদে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এর মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণও নিশ্চিত হচ্ছে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম