কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ উলম্ব খামার তৈরি করা হয়েছে সম্প্রতি আমেরিকার নিউ জার্সিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কৃষি খামার প্রতিষ্ঠান অ্যারোফার্মস নিউইয়র্কে একটি পুরাতন স্টিল মিলের ভেতর ৬,৫০০০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নতুন একটি সেট স্থাপন করেছে। যা অ্যারোফার্মসের বর্তমান ২,৮০০ বর্গমিটার সাইটের থেকে মাত্র এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত। এটির কাজ সম্পন্ন হলে উলম্ব খামার থেকে উল্লেখযোগ্য হারে তাজা শাক-সবজি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। একের পর এক ২৪ মিটার উঁচু তাক বসিয়ে যে পরিমাণ জায়গা তৈরি হচ্ছে তাতে কোম্পানিটি বছরে ৯ লাখ কেজি শাক-সবজি উৎপাদনের আশা করছেন।
অ্যারোফার্মস যেভাবে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তা আরও অসাধারণ। পুরোপুরিভাবে কীটনাশকমুক্ত এবং ছাদের তলায় সূর্যের আলোর পরিবর্তে স্বল্পশক্তির এলইডি লাইটের আলোয় স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে সবজির গুণাগুণ, রং, গন্ধ অটুট রেখে উৎপাদন বৃদ্ধির উপযোগী করা হচ্ছে। কোম্পানিটি বলছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে একই পরিমাণ জায়গায় জমির ৭৫ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব।
লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টানেল যা এখন পরিত্যক্ত সেখানে একটি উলম্ব খামার কোম্পানি উলম্ব খামারের জন্য উপকরণ স্থাপন করেছে, জার্মানিতেও সুপারমার্কেটের ভেতরে ক্ষুদ্র উলম্ব খামারের চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ইউরোপের অন্যত্র নেদারল্যান্ডে টেকসই গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমে উলম্ব চাষপদ্ধতিতে শহরের অভ্যন্তরে নিজেদের প্রয়োজনীয় জৈব খাবারের জোগানের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন।
উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
অ্যারোফার্মসের বিপণন প্রধান এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওশিমা বলেন, খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তনের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা ও কীটনাশক সমস্যার জন্য উন্মুক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। আমাদের জন্য নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন এবং উলম্ব খামার চাষপদ্ধতি এই পরিবর্তনশীলতার ওপর বেশি করে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম করবে। অ্যারোফার্মসের সবজি আসলে মাটিতে রোপণ করা হয় না। এগুলো মূলত প্লাস্টিককে পুনঃব্যবহার করে বার বার ব্যবহার করার মতো তৈরি কাপড়ের সিটে করে রোপণ করা হয় এবং মৃদু পানির ফোয়ারার স্প্রে থেকে সবজিগুলো পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। এই কৌশলের মাধ্যমে হাইড্রোফোনিক পদ্ধতি থেকে ৪৫ শতাংশ এবং মাঠ চাষপদ্ধতি থেকে ৯৫ ভাগ কম পানি ব্যবহার হয়।
উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী স্টিফেন জে ভেনচার বলেন, শহরের মতো এমন ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা যেখানে জায়গা খুবই সীমাবদ্ধ, এরকম পরিস্থিতিতে কৃত্রিম আলোয় উৎপাদিত খাদ্য এবং এটি উলম্বভাবে সংরক্ষণ করে যা স্পাউট বা সালাদ সবজির মতো পচনশীল পণ্যগুলোর একটি তাৎক্ষণিক ও স্থানীয় বাজার ব্যবস্থায় সরবরাহ করার প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কৃপ্র/ এম ইসলাম