প্রতিক্ষন ডেস্ক : নাটোরে গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে বিপর্যস্ত জীবনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে মধুমাসের রকমারি ফল। বাজারে নানান ফলের পশরা নাগরিক জীবনে উৎসবের আমেজ নিয়ে এসেছে। বাজারে এখন আম, লিচু, তাল, জামরুল আর জামের ব্যাপক সরবরাহ। সবে আসতে শুরু করেছে কাঁঠাল। খবর বাসসের ।
গ্রীষ্মের ফল উৎপাদনে উত্তরবঙ্গের রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। উত্তরবঙ্গে মধ্যভূমির অবস্থানে থেকে নাটোরও এই ঐতিহ্যের ধারক। গ্রীষ্মকালীন ফল নাটোরের উৎপাদন অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। তাই এলাকার মানুষ ফল উৎপাদনে এখন অনেক বেশি সচেতন ও আগ্রহী। জেলায় ফলের আবাদী জমি ও ফলন- উভয়ই বেড়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনকারী ২২ জেলার মধ্যে নাটোরের অবস্থান শীর্ষে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরে জেলায় ৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ৯৯০ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছর আমের আবাদী জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টর। এতে ৫৯ হাজার ১৬৬ টন ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত মৌসুমেই জেলায় ৬২৮ হেক্টর জমি থেকে প্রায় আড়াই হাজার টন লিচু উৎপাদন হলেও চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৩২ হেক্টর আবাদী জমি থেকে অন্তত ৫ হাজার টন লিচু উৎপাদন হবে। এবার ৬৬ হেক্টর আবাদী জমি থেকে আশা করা হচ্ছে ২৬৩ টন জাম উৎপাদন হবে। আর ১০৫ হেক্টর জমি থেকে আশা করা হচ্ছে এক হাজার ৬০৬ টন তাল উৎপাদন হবে। চলতি বছর ১৪ হেক্টর জমি থেকে ৮০ টন জামরুল পাওয়া যাবে। এবার ৩০০ হেক্টরে সাড়ে ৫ হাজার টন কাঁঠাল উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর বাইরে ৫২৭ হেক্টর জমিতে জেলায় প্রায় ২০ হাজার টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। জেলায় ৪৪০ হেক্টর আবাদী জমি থেকে বাঙ্গী প্রাপ্তির পরিমাণ ৬৩২০ টন। দেশীয় খেজুর পাঁচ হাজার ৭২৩ টন সংগ্রহ করা হবে ৫০০ হেক্টর জমি থেকে।
নাটোরে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন ভাল। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর, বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা এবং বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর এলাকার লিচু প্রসিদ্ধ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব এলাকার লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। বর্তমানে নাজিরপুরের লিচু শেষ পর্যায়ে, বাজারে তমালতলার লিচুর এখন ব্যাপক প্রসার, এরপরেই বাজারে আসতে শুরু করবে রাজাপুরের লিচু।
নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার আমচাষী আব্দুল গফুর বলেন, নাটোরে এবার আমের ফলন আশানুরূপ। আম ও লিচুর বাগান গাছে ফল আসার শুরুতেই বিক্রি করে দেওয়া এলাকার দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। এসব বাগানের ক্রেতা স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা।
গাছ থেকে আম পাড়তে কৃষি বিভাগ সময়ের বিধি নিষেধ আরোপ করায় পর্যায়ক্রমে আম বাজারে আসছে। গোপাল ভোগ প্রায় শেষ হয়ে বাজার এখন লক্ষণ ভোগ, ক্ষিরসা, হীমসাগর ও রাণীপছন্দ আমের সমারোহে ভরপুর। এরপর জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে আসবে ল্যাংড়া, পর্যায়ক্রমে মল্লিকা, রূপালী, ফজলি ইত্যাদি।
নাটোরে বাজারের আনাচে কানাচে ফলের ডালি সাজিয়ে বসেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ভাল মানের আম কেজি প্রতি গড়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জাম ৭০ টাকা। ১০০ লিচুর বাজার দর গড়ে ৩০০ টাকা। তিন চোখের তালের শ্বাস বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে। শেষ পর্যায়ে থাকা জামরুলের বাজার দর কেজি প্রতি ৪০ টাকা। মাঝে মধ্যে বাজারে তরমুজ দেখা দিলেও বাঙ্গী রয়েছে প্রচুর পরিমাণ। মানুষের গাছ-গাছালির বাগান ও বাড়ীর আঙ্গিনায় কড়মচা, লটকন ও ফলসা গাছে ফল ধরেছে। মাঝে মধ্যে এসব দেশীয় ফল বাজারেও উঠতে দেখা যাচ্ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সচেতনতা বাড়ার ফলে নাটোরে রকমারী ফলের আবাদী জমি ও বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকার মানুষেরা ফল থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন। গাছ থেকে আম পাড়তে সময়ের বিধি নিষেধ থাকায় নাটোরের আম কেমিক্যাল মুক্ত বলে তিনি মনে করেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম