কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহী জেলায় এ বছর আলুর ফলন ভালো হলেও চাষীদের মুখে হাসি নেই। একে তো বাজারে আলুর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে স্থানসঙ্কুলানের অভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না হিমাগারেও। তার ওপর বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় চাষীদের মধ্যে বিরাজ করছে পচন আতঙ্ক। ফলে অল্প দামেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
আলুচাষীরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন ৮৫ কেজির প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও তা ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে হঠাত্ করেই বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় তড়িঘড়ি করে মাঠ থেকে আলু তুলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু হিমাগারগুলোয় জায়গা না থাকায় এসব আলু সংরক্ষণেরও কোনো উপায় নেই। এরই মধ্যে জায়গা নেই জানিয়ে এলাকায় মাইকিংও করেছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। ফলে বস্তাবন্দি অবস্থায় আলুগুলো মাঠেই রেখে দিতে হচ্ছে। আর পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাদের কারণেই হঠাত্ করে ফসলটির দাম কমে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন চাষীরা।
রাজশাহীর নয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে বাগমারা, মোহনপুর, তানোর, পুঠিয়া ও বাঘা উপজেলায়। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর জেলায় আলুর উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ৪৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩০০ টন। এরই মধ্যে ৭১ শতাংশ জমির আলু উঠে গেছে। আর সব মিলে মোট উত্পাদন হতে পারে সাড়ে ৯ লাখ টনেরও বেশি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কেজেএম আবদুল আউয়াল জানান, হেক্টরপ্রতি উত্তোলনকৃত আলুর ফলনের হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বর্তমান মৌসুমে আলুর ফলন শতকরা ২২ ভাগ বেশি হবে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, ‘পদ্মা নদীর অববাহিকা আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আর চলতি বছর উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকা।’
তবে উত্পাদন ভালো হলেও হিমাগারে সংরক্ষণ সংকটের কারণে চাষীদের স্বস্তি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাষীদের একটি বড় অংশই হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন। ঋণগ্রহণকারী এসব চাষী ছাড়াও যারা আগাম বুকিং দেন, তারাই হিমাগার সুবিধা পান। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় হিমাগার রয়েছে ২৭টি। এসব হিমাগারে মোট ধারণক্ষমতা সাড়ে তিন লাখ টন। ফলে স্থান না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ চাষীই উত্পাদিত আলু প্রতি বছরের মতো এবারো সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।
চাষীরা বলছেন, আলু চাষে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২৭-২৮ হাজার টাকা। অথচ মাঠ থেকে তুলে এসব আলু বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। এতে প্রান্তিক চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বাণিজ্যিক চাষীরা কোনোরকমে ক্ষতি এড়াচ্ছেন। তবে হিমাগারে সংরক্ষণ না করতে পারাই এ ক্ষতির মূল বলে জানিয়েছেন তারা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারলে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না। এ পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে কথা হলে রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত আলুচাষী আব্দুর রহিম সরকার জানান, হিমাগারগুলো প্রথম দিকে প্রান্তিক চাষীদের কিছু আলু নিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। মূলত বাণিজ্যিক চাষীদের আলুতেই ভর্তি হয় এসব হিমাগার। এসব চাষী হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন। আর সংরক্ষণ করতে না পেরে অনেক বাণিজ্যিক ও প্রান্তিক চাষী বাধ্য হয়ে সস্তায় আলু বিক্রি করে দেন।
বিষয়টি স্বীকার করেন রাজশাহীর এক হিমাগার ব্যবস্থাপক। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আলু সংরক্ষণে হিমাগার থেকে ঋণ নেয়া চাষীরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কারণ এসব চাষীর আলু হিমাগারে না নিলে তারা ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়বেন। এছাড়া আগাম বুকিং চালু থাকায় পরে এলে আর এ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম