কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার একমাত্র সরকারি মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের হ্যাচারিতে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত্ মাছের রেণু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন এলাকার মৎস্য চাষিরা। মাছের পোনা না পাওয়ায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে পরিচালিত এ মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রটি এলাকার মৎস্য চাষিদের কোনো উপকারে আসছে না। নিরুপায় হয়ে চাষিরা মাছের রেণৃ সংগ্রহ করছেন ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত স্থানীয় কয়েকটি হ্যাচারি থেকে কেউ কেউ রেণু বা মাছের পোনা সংগ্রহ করছেন যশোর, কুষ্টিয়াসহ দেশের দূর এলাকা থেকে।
এমনকি সরকারি এ মৎস্য কেন্দ্রও নিজস্ব খামারে পোনা উৎপাদন না হওয়ায় এখানকার ৯টি পুকুরে অন্যস্থান থেকে পোনা এনে ছাড়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজার থেকে পোনা কিনে খামার কর্তৃপক্ষ সরকারি জলাশয় কিংবা উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করছেন। কয়েক বছর আগে গৌরনদী পোনা খামারের চতুর্দিকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বাউন্ডারি ওয়াল। গত বছর প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি পুকুরের চারপাশে গাইড ওয়াল তৈরি করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর পোনা উপাদনের নামে সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু মত্স্য হ্যাচারিটি চালুর ব্যাপারে দীর্ঘদিনেও উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয় মত্স্য চাষিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গৌরনদী মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মহান স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সরকারি উদ্যোগে উপজেলার দক্ষিণ পালরদী মৌজায় ১৪ একর জমির ওপর এ মৎস্য কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে এখানে খনন করা হয় ৯টি পুকুর। ১৯৮৫ সালে এখানে রেনু উৎপাদনের জন্য একটি হ্যাচারি তৈরি করা হয় । মাত্র ২ বছর যেতে না যেতেই হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, হ্যাচারির জন্য গভীর নলকূপ থেকে তোলা পানি লবণাক্ত। নোনা পানিতে পোনা উৎপাদন করা যায় না এ ওজুহাত দেখিয়ে পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দেয় খামার কর্তৃপক্ষ। পরবর্তিতে দীর্ঘদিন যাবত্ চালু না থাকায় হ্যাচারির গভীর নলকূপটি বিকল হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের জন্য ব্যবহূত পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। দীর্ঘ দিন যাবত্ পোনা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারি মৎস্য খামারের একমাত্র হ্যাচারিটি এখন স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। হ্যাচারির বাইরে তৈরি করা পাকা হাউজগুলোর মধ্যে বিভিন্ন গাছ-পালা জন্মে একাকার হয়ে গেছে।
মাছের পোনা ব্যবসায়ী মিরন জানান, ‘ তারা দাসের হাট খোলা, গুপ্তের হাট থেকে পোনা কিনে আনেন। গৌরনদী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও খামারের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা মোঃ লিটন বেপারী ক্ষোভের সাথে জানান, প্রায় ৩০ বছর যাবত্ গৌরনদীর সরকারি মৎস্য খামারে রেণু উপাদন হচ্ছে না। আগে এখানে মৎস্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত্ তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ এ খামারের জন্য সরকারের প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তিনি দ্রুত হ্যাচারিটি চালুর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপক দেবব্রত বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘ ৮ মাস আগে আমি এখানে যোগদান করেছি। বন্ধ হয়ে যাওয়া হ্যাচারিটি চালু করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা ইতোমধ্যে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করেছি। আশা করি অচিরেই হ্যাচারিটি চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।’
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম