কৃষি প্রতিক্ষণ দেস্কঃ ভোলার মনপুরা উপজেলার দুর্গম চর নিজামে প্রায় ৫০ একর সরকারি জমির বন কেটে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। ভোলার মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বসত-বাড়ি বিলীন হওয়া দুই শতাধিক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্গম চর নিজামে বন কর্মকর্তাদের সহায়তায় বসতি গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান চর নিজামের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান একটি চক্রের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনের গাছ-পালা কেটে সেখানে টাকার বিনিময়ে অনেককে জমি বন্দোবস্ত দেন। তবে কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও জমি পাননি। অভিযোগ রয়েছে জমির জন্য টাকা দিয়ে জমি না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে বিট কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।
জানা যায়, মনপুরার চর নিজামের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী তারেক, মো. শহীদ, আনিছ, রাসেল, রজব আলী ও সাদ্দামের মাধ্যমে বনের জমি দখল দেওয়ার নামে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান। ভুক্তভোগী মো. মঞ্জু ফরাজী অভিযোগ করেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর করে থাকার জন্যে জমি দিবে বলে আমার ও আমার বড় ভাই জসিম ফরাজীর কাছ থেকে দুই কিস্তিতে বনরক্ষী শহিদ, আনিছ ও তারেকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেয় বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান। টাকা নেওয়ার পর এখন জমি না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
একই চরের ভুক্তভোগী রহিমা বিবি জানান, তাদের আগের বাড়ি মেঘনায় ভেঙ্গে যাওয়ার পর তারা চর নিজামে আসে। অন্যান্য ভূমিহীনদের মত কয়েক কিস্তিতে ২৮ হাজার টাকা দিলে তাদেরকে জায়গা দেখিয়ে দেয় বন বিভাগের লোকজন। ঘর তোলার পর আরো ২৫ হাজার টাকা দাবি করে বন প্রহরীরা। দাবি করা টাকা না দেয়ায় তার স্বামী ও ছেলেকে গাছকাটা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
একই ধরনের অভিযোগ করেন চরের বাসিন্দা মো. মোতাহার ও আবদুল খালেকের। তারা জানান চরের বাসিন্দা মকবুলের কাছ থেকে ২৫ হাজার, মো. রিপন ৪৪ হাজার, আকলিমা বেগম ৩৫ হাজার, রানু বিবি ১৪ হাজার, দুলাল ১৩ হাজার, বিনু বেগম ৩০ হাজার, মো. জামাল ৪৮ হাজার, বাচ্ছু ২০ হাজার, মো.হাফেজ ৪৫ হাজার, হাসনা বেগম ১৬ হাজার, জাহেদা ৪০ হাজার, আয়েশা ১৬ হাজার, বিবি কুলসুম ২০ হাজার, মোস্তফা ৫০ হাজার, আংকুরা বেগম ৩০ হাজার, সাহেনুর ১৭ হাজার, ইয়ানুর ২৮ হাজার, কামাল ৭০ হাজার, রিয়াজ ২০ হাজার, মালেক ২০ হাজার, জসিম ফরাজী ২৫ হাজার, মোবারক ৮ হাজার, হাবিব উল্যাহ ৩০ হাজার, সিরাজ ২৬ হাজার, মো.বাচ্ছু ৪ হাজার, মনোয়ারা ১২ হাজার, মিন্জু বেগম ২৫ হাজার, মো. ইউসুফ ৩৫ হাজার, মো. সুমনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দালাল চক্রের মাধ্যমে নেন বন বিভাগের বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান।
তারা এ ব্যাপারে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগীরা বিচার চেয়ে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এর নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তিনি ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত বিট অফিসার আক্তারুজ্জামান অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, সরকারি বনের গাছ কেটে বসত-বাড়ি নির্মাণের দায়ে কিছু লোকের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরো কয়েকটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
বন কর্মীদের বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে বন কেটে বসতি স্থাপনে সহযোগিতার বিষয়ে ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রুহল আমিন জানান, যারা বন কেটে ঘর তুলেছে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। ভূমিহীনদের সাথে বন বিভাগের কর্মকর্তার অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে সেগুলো আমরা তদন্ত করব। প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন বিভাগের নথী সূত্রে জানা গেছে ১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বর উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্নিঝড়ের পর এ অঞ্চলকে প্রাথমিক ভাবে ঝড়ের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য ১৯৭২ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলার চরফ্যাশনের চর নিজামসহ ১৩ টি চরে বনায়নের জন্য বন বিভাগকে নির্দেশ দেন । এরপর থেকে বন বিভাগ ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরার বিভিন্ন চরে বনায়ন করেছে। যেটি এখন সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। যেখানে রয়েছে হাজার হাজার হরিনসহ শত শত বন্য প্রাণী।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম