কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুগ্ধ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বেড়েছে মাংসের সরবরাহও। তবে এক্ষেত্রে উল্টো সিলেটের প্রাণিসম্পদ বিভাগ। যদিও সেখানে রয়েছে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি উন্নয়নে বিস্তৃত খামার।দুগ্ধ উৎপাদনে সিলেট ডেইরি ফার্মের সক্ষমতা দৈনিক ৮০০ থেকে কমে ১০০ লিটারে ঠেকেছে। গরুর সংখ্যা ৪০০ থেকে কমে ১০০তে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ছাগল উন্নয়ন ফার্মে কোনো ছাগল নেই। অনেকটা দরিদ্র অবস্থা সরকারি হাঁস-মুরগি ফার্মেরও। সম্প্রতি সিলেট বিভাগীয় শহরের টিলাঘর এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে গরু ও ছাগল থেকে মোট দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৬ লাখ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ লাখ টন। অন্যদিকে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাংসের জোগান ছিল ১০ দশমিক ৪০ লাখ টন, যা গত অর্থবছর পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৫৯ লাখ টনে। দুধ ও মাংস উৎপাদনে পুরো দেশের যখন এমন চিত্র, তখন সিলেট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত খামারগুলোয় উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিলেট নগরীর বালুচরে ২৩১ একর জমি নিয়ে সরকারি দুগ্ধ খামারটি যাত্রা করলেও বর্তমানে এর জমির পরিমাণ ৮৭ একরে এসে ঠেকেছে। খামারটির গাভী ও ষাঁড় বিচরণ সক্ষমতা ৪৩০টি। কিন্তু বর্তমানে গাভী-ষাঁড়সহ মোট ১২০টি গরু রয়েছে সেখানে। এর মধ্যে দুধ দেয়া গাভীর সংখ্যা ২১টি। এসব গাভী থেকে দৈনিক ১০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। অথচ এ খামার থেকে মোট দুধের চাহিদা রয়েছে ৮০০ লিটার। কয়েক বছর ধরেই এভাবে চলছে খামারটি। ফলে এখান থেকে আর্থিক কোনো সুফল পাচ্ছে না সরকার।
এ বিষয়ে সিলেট দুগ্ধ খামারের সহকারী পরিচালক (পোলট্রি ফার্ম) মো. কামরুজ্জামান বলেন, খামারটি কয়েক বছর ধরে লোকসানে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ ও কৃষকের মাঝে তা চাষে উদ্বুদ্ধকরণের কাজটিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দুগ্ধ খামারের চেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দেখা গেছে জেলার ছাগল উন্নয়ন ফার্মে। প্রায় ২৮ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এ খামারে বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি ছাগল রয়েছে। যদিও এ খামারে ৩০০-এর বেশি ছাগল থাকার কথা।
ফার্মসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারা খামার থেকে যখন তখন ছাগল ছিনিয়ে নেন। এ কারণে খামারের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছে না। দুগ্ধ খামার ও ছাগল উন্নয়ন ফার্মের পাশেই রয়েছে সরকারি হাঁস-মুরগি খামার। ১৯৪৭ সালে প্রায় ১৩ একর জায়গাজুড়ে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে খামারটির দুটি লেয়ার শেড, পাঁচটি গ্রোয়ার শেড ও তিনটি ব্রুডার শেডের ১০ হাজার বাচ্চার ধারণ সক্ষমতা রয়েছে। যদিও খামারে হাজারখানেক হাঁস-মুরগিও দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. মো. আবুল কালাম বলেন, সরকারি খামারগুলো থেকে দুধ ও মাংসের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর যতটা জোর দেয়া হয়, তার চেয়ে আমরা কতটা ব্রিড বা জাত উন্নত করতে পেরেছি, সেটার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি। তবে সরকার যে অর্থ ব্যয় করে তা যেন অপচয় না হয়, সেদিকে লক্ষ আছে আমাদের।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম