কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় জেগে ওঠা যমুনার বিশাল ধুধু বালুচরে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বানভাসি মানুষেরা। আর এই সবুজ বিপ্লব ঘটেছে বিভিন্ন ফসলের সফল চাষের মধ্যদিয়ে। যমুনার ধুধু বালুচরে কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো, দুরন্ত কিশোরদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়েছে। সরিষা, ভুট্টা, মশুর-খেসারি ও মাষকালাই, বাদামসহ অন্তত ১০ ধরনের রবিশস্যের আবাদ হচ্ছে। সেইসাথে আবাদ হচ্ছে বোরো ধান, পাট ও আখ। অনেক পরিশ্রমের এ ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বানভাসি কৃষকেরা। সম্প্রতি যমুনার চরাঞ্চলে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর দক্ষিণ দিকের ৫নং পিলার থেকে ২৩নং পিলার ও সেতুর উত্তরদিকের ৬নং পিলার থেকে ১৭নং পিলার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশাল আকারের চর জেগে উঠেছে। প্রতিবছর এই সেতুর নিচে ধান, কাশ, বিভিন্ন প্রকার সবজিসহ নানা চাষাবাদ শুরু হয়েছে। করালগ্রাসী যমুনার দক্ষিণে পাবনার বেড়াকোলার থেকে উত্তরে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২০০ কি.মি. নদীর অভ্যন্তরে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষাবাদ হতো। যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও কালিহাতী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এ চরে সবুজ ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা বা পরামর্শ ছাড়াই শুধুমাত্র নিজেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বোরো ধান ও পাট, আখসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছে এখানকার কৃষকরা। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের যমুনার বুকে গত চার-পাঁচ বছর ধরে জেগে উঠেছে চর। যা বর্তমানে বিস্তৃত লাভ করেছে শতশত একর পর্যন্ত। এর মধ্যে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কোনাবাড়ি ও চরচিতুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের জমি জেগে উঠেছে। আর এ বিশাল চরেই বানভাসি মানুষেরা গড়েছেন সম্ভাবনার নতুন জগত্ যেখানে তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন।
অপরদিকে ভাঙা-গড়ার এই যমুনা নদীর খেলায় জীবনযুদ্ধে মেতে ওঠা সব হারানো বানভাসিরাও যে রাক্ষুসি যমুনার নির্দয় বুকে আঁকতে পারে সবুজের চিত্র এমনটাই প্রমাণ করে দিয়েছে ভূঞাপুর ও কালিহাতী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা। এদিকে কৃষকের এমন সাফল্যে সরকারিভাবে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা। ভূঞাপুর উপজেলায় চরাঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
ভূঞাপুর উপজেলার খানুরবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আকন্দ জানান, বর্ষা মৌসুমে এ চর পানির নিচে থাকার কারণে বালু মাটির উপর পলির স্তর জমে। যা ফসল আবাদের জন্যে খুবই ঊর্বর হয়ে ওঠে। আর এই জমিতে আবাদ করে আমরা এখন খুবই লাভবান হচ্ছি। জুলমত শেখ জানান, পানি নামার সাথে সাথে জমির মালিকরা অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে সেখানে গবাদিপশুও চরানো হচ্ছে। চরাঞ্চলের একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের কেউ কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ দিতে আসেন না। নিজেদের চেষ্টায় সফলতা এনেছি আমরা। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি বিভাগ যদি গভীর নলকূপ বা ভিন্ন কোনো উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করতো তাহলে যমুনার এই বালুচরে ফসলের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতো।
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/ এম ইসলাম