কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নেত্রকোনার হাওড়পাড়ের জেলে অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় শুঁটকি। রাসায়নিক উপকরণ ছাড়াই তৈরি এ শুঁটকির চাহিদা দেশজুড়ে থাকলেও পুঁজির সংকট ও সংরক্ষণাগারের অভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে না সম্ভাবনাময় এ খাত। জানা গেছে, পর্যাপ্ত মাছের জোগান থাকায় নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী উপজেলার হাওড়পাড়ের অন্তত ৫০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ছোট-বড় শুঁটকির আড়ত। সেখানে প্রতি বছর অন্তত তিন থেকে চার হাজার টন শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। পুঁটি, বোয়াল, কাকিয়া, টাকি, শোল মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। দেশজুড়ে নেত্রকোনায় উৎপাদিত শুঁটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
জানা গেছে, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের গরুহাট্টা বাজারে বিক্রি হয় অন্যান্য উপজেলার উৎপাদিত শুঁটকি। সপ্তাহে প্রতি বুধবার ওই বাজারে জমে ওঠে শুঁটকি কেনাবেচা। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি ও খুচরা দামে শুঁটকি কিনতে ভিড় করেন এ বাজারে। প্রতি সপ্তাহে এ বাজার থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার শুঁটকি কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ভৈরব, সিলেটসহ অন্তত ২০ জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা মোহনগঞ্জের গরুহাট্টা থেকে শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। পুঁটি, টেংরা, গুছি, বাতাসি, সাঠি, চান্দা, শোল, বোয়ালসহ নানা জাতের শুঁটকি মাছ পাওয়া যায় এ বাজারে। জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি শুঁটকি সর্বনিম্ন ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু পুঁজি না থাকায় চড়া সুদে মহাজনি ঋণ নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করায় লাভবান হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা। তাই কম সুদে ব্যাংক ঋণসহ সরকারি সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শুঁটকি সংরক্ষণাগার না থাকায়। সংরক্ষণাগারের অভাবে অনকে সময় উৎপাদিত শুঁটকি নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেক ব্যবসায়ী শুঁটকি নষ্ট হওয়ার ভয়ে কম করে উৎপাদন করেন, আবার অনেক সময় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে দিন দিন শুঁটকি উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা।
মোহনগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মত্স্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, প্রতি কেজি পুঁটিমাছের শুঁটকি প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি লাটি মাছের শুঁটকি বিক্রি হয় ৮০০-৯০০ টাকায়। এছাড়া বোয়াল ৬০০-৭০০, বড় শোল ৪০০-৫০০ ও প্রতি কেজি কাচকি মাছের শুঁটকি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে, কিন্তু পুঁজি না থাকায় ও সংরক্ষণাগার না থাকায় জেলেরা বেশি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন করতে পারেন না। এছাড়া অনেক জেলে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করেন। এতে বিক্রির পর যে টাকা লাভ হয় তা দিয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করে খালি হাতে বাড়ি যেতে হয় জেলেদের। তাই অনেকেই এখন শুঁটকি উৎপাদন ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
জেলা মত্স্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যে এ খাতের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শুঁটকি উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের কম সুদে ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি এ সমস্যা দ্রুতই কেটে যাবে। তিনি বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষ শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।
কৃপ্র/ এম ইসলাম