কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাজারে পাটপণ্যের দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় ময়মনসিংহ জেলায় দিন দিন বাড়ছে পাট চাষ। গত ১০ বছরে জেলায় পাটের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে আবাদকৃত জমির পরিমাণও। এতে স্থানীয় কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন।
ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ২০০৭ সালে ৫ হাজার ৬৬১ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ হয় ৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে। অর্থাত্ ওই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭৬ হেক্টর কম জমিতে পাটের আবাদ হয়। ওই বছর জেলায় ৪২ হাজার ৫৯৩ বেল পাট উৎপাদিত হয়। ২০০৮ ও ২০০৯ অর্থবছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও ২০১০ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি জমিতে পাট চাষ হয়। ওই বছর ৮ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাষ হয় ১৩ হাজার ৭৫ হেক্টরে। ২০১০ সালে জেলায় ১ লাখ ৬৬০ বেল পাট উৎপাদিত হয়। ২০১৬ সালে ৮ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয় ৮ হাজার ২২৯ হেক্টরে। ওই বছর জেলায় ৮৭ হাজার ৮২৩ বেল পাট উৎপাদিত হয়। চলতি বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২২৭ হেক্টর জমিতে। এ বছরও আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদিত হয় ত্রিশালে। এ উপজেলায় গত পাঁচ বছরে পাটের চাষ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। চলতি বছর শুধু ত্রিশাল উপজেলায়ই এক হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা পাট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ত্রিশাল উপজেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন করা হয়। ত্রিশাল উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে কাঁঠাল ইউনিয়নের ধলাইমান, বানিয়া ধলা, কানিহারী ইউনিয়নের সুলতানপুর, বিয়ার্তা, ঝিলকি, বাড়াইগাঁও, এলংজানি, বালিপাড়া ইউনিয়নের চরমাদাখালী, নতুনচর, রামপুর ইউনিয়নের বীররামপুর, উজানপাড়া, ভাটিপাড়া, ত্রিশাল ইউনিয়নের ছলিমপুর, মঠবাড়ী ইউনিয়নের রায়মনি, পোড়াবাড়ী, আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম, সাখুয়া ইউনিয়নের বাবুপুর, বইলর ইউনিয়নের কানহর, সম্মুখ বইলর, মোক্ষপুর ইউনিয়নের লালপুর, কৈতরবাড়ী ও হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রামসহ ২০টি গ্রামে এখন কৃষিপণ্য উৎপাদনের মধ্যে কৃষকরা পাটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ধলাইমান গ্রামের পাটচাষী এনামুল হক জানান, গত মৌসুমে পাটের ফলন ভালো হয়েছে, ওই বছর আমি ১ লাখ টাকার শুধু পাটই বিক্রি করেছি। ত্রিশাল উপজেলা পাট কর্মকর্তা রনি আক্তার জানান, কৃষকরা এখন পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বীজ বিতরণের সময় না হলেও এরই মধ্যে অনেক কৃষক বীজের জন্য অফিসে যোগাযোগ করেছেন। অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে পাট চাষের প্রতি আগ্রহ আরো বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর রিপন জানান, ‘পাট চাষে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি অনেক এলাকার পাট চাষে জড়িত কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছি। পাট চাষে উৎসাহ দেয়ার জন্য গত বছর কৃষকদের পাট মাড়ানোর জন্য ২৫টি রিভনার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর আরো ২৫টি মেশিন দেয়া হবে। পাটের উৎপাদন বাড়লে পাটপণ্যের বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলতাবুর রহমান জানান, পাট চাষের জন্য কৃষকদের সব রকমের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। জেলায় দিন দিন পাটের উৎপাদন বাড়ছে। কৃষকরা লাভবান হওয়ায় আবার পাটের গৌরব ফিরে এসেছে। সোনালি আঁশের ব্যবহার বাড়ার কারণে কৃষকরা পাটের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম