কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যশোরের মণিরামপুর, শার্শা ও অভয়নগর উপজেলায় বোরো ক্ষেতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে পরিপক্কতা আসার আগেই ধানের থোড় শুকিয়ে চিটা ধরেছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়ায় ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আট উপজেলায় এবার ১ লাখ ৫১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মণিরামপুর উপজেলার হয়েছে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টন। কিন্তু ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এ লক্ষ্য অর্জন নাও হতে পারে।
স্থানীয় কৃষি অফিস বলছে, হঠাৎই তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এ রকম হয়েছে। তবে নতুন করে আর কোনো ক্ষেত আক্রান্ত না হয় সেজন্য তারা কাজ করছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের আগাম পরামর্শ পাননি বলেই এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
সরেজমিন এ উপজেলার নেহালপুর, কুলটিয়া ইউনিয়নের কাজিয়াড়া ও আম্রঝুটা বিলে ধানের থোড় শুকিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় কাজিয়াড়া গ্রামের কৃষক ওলিয়ার রহমান জানান, তিনি এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কিন্তু তার ক্ষেতের ধানের থোড় নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
শুধু ওলিয়ার নন, এ এলাকার ইকবাল, জালাল, জব্বারসহ বহু কৃষকই এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। আম্রঝুটা গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। এ সময় সাতগাতি গ্রামের কৃষক বিভূতি পাল অভিযোগ করেন, ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হলেও আজ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কারো দেখা মেলেনি। একই অবস্থা উপজেলার তারুয়াপাড়া, প্রতাপকাটি, ঢাকুরিয়া, সুবলকাটিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের।
তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার কৃষকদের খোঁজ না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কৃষকদের অনেক আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। এমনকি ছত্রাকের আক্রমণ এড়াতে ক্ষেতে নাটিভো, ফিলিয়া, ট্রোপার, প্রভিফেনজাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শার্শায় চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বাসমতি ধান। তবে ব্লাস্ট ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বহু বিঘা জমির বাসমতি ধান। বিশেষ করে উপজেলার বেনাপোল, বাহাদুরপুর, লক্ষ্মণপুর, ডিহি, শার্শা ও উলাশী এলাকায় এ রোগাক্রান্ত জমির পরিমাণ বেশি।
লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের চাষী ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে বাসমতি ধান চাষ করেছি। পুরোটাই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো ওষুধ দিয়েও সুফল পাচ্ছি না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাছাড়া আমি তাদের চিনিও না।’ স্বরূপদহ গ্রামের চাষী মজিবর রহমান, বাবলু, শাজাহান, গয়ড়া গ্রামের শওকত আলী বাসমতি ধানের আবাদ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের জমিতে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকে আক্রমণ ঘটেছে।
আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে শার্শা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত বাসমতি ধানের প্রত্যেক জমি নিজ চোখে দেখে চাষীদের পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে।’ একই রোগে ধানগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে অভয়নগর উপজেলায়ও। এ উপজেলার ধোপাদী গ্রামের জালাল হোসেন জানান, ধান আবাদে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ধানে চিটা হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শুধু আমার জমিই নয়, আশপাশের বেশির ভাগ জমির ধানগাছই শুকিয়ে যাচ্ছে।’
বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুর রহমান। তিনি জানান, কিছু জমিতে ছত্রাক লেগেছে। তবে আর যাতে না লাগে, সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাদের সতর্ক করতে আমরা লিফলেটও বিতরণ করছি। এ ব্যাপরে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক চণ্ডী কুমার দাস জানান, জেলায় মোট আবাদকৃত জমির মধ্যে মাত্র ১২ থেকে ১৫ হেক্টরে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। তবে নতুন করে আর যাতে কোনো জমি আক্রান্ত না হয়, সেজন্য কৃষি বিভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম