কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নদী , জলাশয় , খাল , বিল রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়নসহ সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, নদী ও জলাশয় রক্ষায় ভূমি, পানি সম্পদ, পরিবেশ, নৌ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া নদী সুরক্ষা আইন যুগ উপযোগী করে তার কঠোর বাস্তবায়নের দাবি জানান। গত মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) আয়োজিত ‘নদী, হাওর, জলাধার রক্ষা ও মানুষের অধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, উন্নয়নের নামে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ভরাটের মাধ্যমে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। জলাধার রক্ষার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। দেশে ডেল্টাপ্ল্যান-২০২১ তৈরি হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে জনগণকে প্রকৃতি রক্ষায় আন্দোলনে শামিল করতে হবে। তিনি বলেন, প্রকৃতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। দেশের মানুষ বাঁচবে। নদ-নদী রক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঢাকার নদ-নদী রক্ষার মাধ্যমে এই অভিযান জোরদার করা হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পানি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলাধার রক্ষার মাধ্যমে মাছকে বাঁচাতে হবে। সুচারু পানি ব্যবস্থা ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব না। জলাভূমি রক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। আইন অনেক আছে কিন্তু বাস্তব উপযোগী আইন হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আড়িয়াল ও চলনবিল নিঃশেষ প্রায়। দেশের বহু জলাভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। জলাভূমির সঙ্গে নদীর কানেকটিভিটি রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, ট্যানারি সরিয়ে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানোর নামে নতুন করে ধলেশ্বরীকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া যাবে না। অবিলম্বে এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে শোধনাগার নির্মাণ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। পানি ব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেচ ও বন্যা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করা যাবে না।
পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ আইনটি (২০১০ পর্যন্ত সংশোধিত) নদী দূষণ রোধ করার ব্যাপারে একেবারেই অকার্যকর। এর ১৫ক ধারা অনুযায়ী বর্জ্য দূষণের ক্ষতিপূরণের মামলা পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকই করতে পারবেন। এই আইনের ১৭ নং ধারায় বলা আছে, মহাপরিচালক হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না। তিনি নদীগুলিকে দূষণমুক্ত করতে মামলা করার ক্ষমতা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিকেন্দ্রীকরণ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, জলাধার রক্ষায় ভূমি, পানি সম্পদ, পরিবেশ, নৌ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যৌথ উদ্যোগে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ এর ভেতরে নদী ও খোলা জলমহাল সংরক্ষণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নদী ও জলাভূমি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করা একান্তই জরুরি।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশীদ বলেন, জলাভূমি রক্ষায় শক্তিশালী পানি কমিশন ও পানি আদালত গড়ে তুলতে হবে। পানি আইন-২০১৩ বাস্তবায়ন, খাস জমি ও জলাশয় প্রকৃত কৃষকদের মাঝে হস্তান্তর, জলমহালের সুষ্ঠু ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানায় ইটিপি স্থাপন, সিএস ও আরএস নকশা অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করার দাবি জানান।
সিলেটের পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কাসমির রেজা বলেন, হাওর অঞ্চলে ছয় মাস জমিতে কৃষকের অধিকার থাকে। বাকি ছয় মাস কৃষক তার জমি ব্যবহার করতে পারে না। এ নিয়ে বাধা দিতে গেলে কৃষকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়। জলাধার আইন থাকা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফলে প্রকৃত মত্স্যজীবীরা জলাশয় লিজ পাচ্ছে না। তিনি এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির চেয়ারপারসন ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম