কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৬শ’ বিঘা জমির বোরো ধান। প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ১২ হাজার ৩শ’ একর জমির বোরো ফসল পানির নিচে। তালায় পাখিমারা বিলের সংযোগ খালের বাঁধ ভেঙে ৬শ’ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। শতাধিক ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে জোয়ারের পানির চাপে কপোতাক্ষ নদের টিআরএম ভুক্ত খালের সংযোগস্থলের বাঁধ ধসে যায়। এতে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি বিলের মধ্যে ও লোকালয়ে প্রবেশ করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী বালিয়া খাল দিয়ে পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বালিয়ায় কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খাল দিয়ে টিআরএম বাস্তবায়নের জন্য খালের পাড়ে মজবুত করে ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার সময় স্থানীয় আরশাদ আলী মোরল ও আলাউদ্দীন মোরল গং বাধা দেয়। যে কারণে খাল পাড়ে মজবুত বাঁধ নির্মাণ না করায় জোয়ারের চাপে বাঁধ ধসে ও উপচে বিল ও লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ধসে পড়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনি হাওরের নিম্নাঞ্চলের ৩শ একর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। শুধু শনি হাওর নয়, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গারউলি, দরুন, গুরমাসহ ২৩টি বোরো ফসলি হাওরে। বৃষ্টির পানি হাওরের ওপরের দিক থেকে নিচ দিকে নামছে আর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের নিম্নাঞ্চলের বোরো ফসল। উপজেলার বিভিন্ন হাওর পাড়ের কৃষকরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। যে সব কৃষক শুধু বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে শনির হাওরে ১৩০ একর, মাটিয়ান হাওরে ১শ’ একর, মহালিয়া হাওরে ৬০ একর, আঙ্গার উলি হাওরে ২৫ একর, সমসা হাওরে ১২ একরের মতো বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে হাওরে আরও বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নেত্রকোনার পূর্বধলায় দুই হাজার একর জমির বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণে উপজেলার জারিয়া, ঘাগড়া, হোগলা, বিশকাকুনী ও আগিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে বিভিন্ন এলাকার বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। ইতোমধ্যে এসব এলাকার প্রায় দুই হাজার একর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পূর্বধলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজুয়ানুল বারী বলেন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ ১০ হেক্টরে নেমে আসবে। উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নমিতা দে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজুয়ানুল বারী, নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে দশ হাজার একর জমির কাঁচাপাকা ধান তলিয়ে গেছে। এসব জমির অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে কৃষকদের শঙ্কা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পাঁচ হাজার কৃষক। মঙ্গলবার থেকে এ অঞ্চলে ক্রমাগত বর্ষণে মেঘনা, ধলেশ্বরী, বৈঠাখালী, করাতিয়া কলকলিয়া, ঘোরাউত্রা, বলাকা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিল-মাকসা, ধোপাবিল, আন্দামান্দা, পদবিল, কৈরাইলের বিলগুলোর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে নদীর তীরবর্তী বিল ও চরাঞ্চলে ইরি বোরো ধানি ক্ষেতে শত শত একর কাঁচাপাকা ধান তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে তিন হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। অপরদিকে বন্ধ রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাথর কোয়ারি বিছনাকান্দি ও জাফলংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম। বোরো ধান পানিতে তলিয়া যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এছাড়া কোয়ারিগুলো পাহাড়ের ঢলে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলার অধিবাসীরা অজানা অতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা রুস্তমপুর ইউনিয়নের ১১৫ হেক্টর, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১৪০ হেক্টর, লেঙ্গুড়ি ইউনিয়নের ২৪০ হেক্টর, আলীর ইউনিয়নের ১৯৫ হেক্টর, নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের ১৮৫ হেক্টর, তোয়াকুল ইউনিয়নের ২৭২ হেক্টর ও ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ১৯৫ হেক্টর বোরো ফসলি জমি রয়েছে।
সুত্রঃ যায়যায় দিন / কৃপ্র/এম ইসলাম