কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ‘হোগলা’ গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এ শিল্পের কারিগর নারীরা। গ্রামের নারীরাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। পারিবারিক বিভিন্ন কাজে হোগলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গ্রামে হোগলার ব্যবহার লক্ষণীয়। ঘরের বিছানা, খাদ্যশস্য রোদে শুকানো, মিলাদ-মাহফিল, পূজা-পার্বণে অনেক মানুষকে বসতে দেওয়ার ক্ষেত্রেও হোগলা ব্যবহৃত হয়। আর এতে স্বাবলম্বী হচ্ছে চরফ্যাশন চরাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলো। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরীমুকরী, ঢালচর, চর শাহজালাল ও চর আশরাফ, দুলারহাট, নীলকমল, কেরামতগঞ্জ, দক্ষিণ আইচা, চর মানিকা এলাকাগুলোয়ও হোগলা পাতা চাষ করতে দেখা যায়।
এক সময় এখানকার অনেক মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত থাকলেও এখন আর নেই। ক্ষুদ্র শিল্প বদলে দিয়েছে তাদের জীবনধারা। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে হোগলা পাতার কাদিডগা লাগানোর উপযুক্ত সময়। জমি চাষ দিয়ে তৈরি করে ছাই, গোবর বা সবুজ সার দিয়ে হোগলা পাতার কাদিডগা এক-দেড় ফুট ফাঁকে ফাঁকে লাইন করে লাগানো হয়। ১৫-২০ দিন পর কাদিডগার গোড়ায় চারা গজাতে শুরু করে। এই চারা ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হলে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে পাতা মোটা ও ১০-১৫ ফুট লম্বা হয়।
হোগলা বেপারী হাসান শেখ জানান, চরাঞ্চলে চাষ করা ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই হোগলা পাতা পাওয়া যায়। নদীর পাড়ে বা চরাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হোগলা কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাসের মধ্যে কেটে শুকিয়ে বিক্রির জন্য হাটবাজারে নিয়ে আসা হয়। এক মুঠি হোগলা পাতা ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক মুঠিতে দুটি হোগলা হয়। প্রতিটি হোগলা পাইকারি ৭০-১৩০ টাকা বিক্রি করা যায়।
চরফ্যাশন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট থেকে ঋণ গ্রহণকারী চর পাতিলা এলাকার নুর নাহার বেগম জানান, অর্থ উপার্জনের জন্য আমাদের ঘরের বাইরে যেতে হয় না। বাড়ির আঙিনায় বসেই হোগলা পাতা দিয়ে উপার্জন করতে পারছি অনেক টাকা। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ও নারীদের উন্নয়ন সম্ভব।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন / কৃপ্র/এম ইসলাম