কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে ডুবে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর খেতের ফসল। ফসল রক্ষার জন্য কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও আধাপাকা ধানই কেটে ঘরে তুলছেন কৃষক। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল বুধবার দুপুরে পানির স্রোতে একটি রেলসেতুর গার্ডার ধসে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানির তোরে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ছোট বড় কয়েকটি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। হাকালুকি, কাউয়াদিঘি, হাইলহাওর পাড়ের কৃষকরা একমাত্র ফসল বোরো ধান চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভারী বর্ষণের ফলে মৌলভীবাজার শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই,ফানাই, বিলাস ও জুড়ী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন ও সাতগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী ভোজপুর এলাকায় প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের স্রোতে রেলওয়ে সেতুর একটি গার্ডার ধসে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আজম জানান, উপজেলার পাহাড়ি এলাকার ভোজপুর এলাকায় রেলওয়ের ১৪১ নং সেতুটির মূল গার্ডারের নিচের মাটি সরে দেবে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্রিজ মেরামতের কাজ চলছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬ উপজেলায় বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক হাজার একর জমির আলু। পরপর ৪ দফায় অতি বৃষ্টির কারণে দেশের অন্যমত আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জের আলু ক্ষেতে পানি জমে পচে গেছে শত শত কোটি টাকার আলু। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে জেলার হাজার হাজার কৃষক। আলু উত্তোলনের সময় হলেও কৃষক বৃষ্টির কারনে আলু তুলতে পারছেনা। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে চলতি অর্থ বছরে মুন্সীগঞ্জের সর্বমোট ৩৯ হাজার ৩শ ২১ হেক্টার জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ টন। যা গতবছরের তুলনায় ১ লক্ষ টন বেশি। কিন্তু কৃষকদের এখন মুলধন টিকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরে বেরিবাঁধ ভেঙে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৭০০ হেক্টর জমির ইরি বোরো ও রবি ফসল তলিয়ে গেছে। দিঘীরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন মুহাম্মদ ফারুক জানান, বাজিতপুর বেঙ্গলা ফিসারীর সন্নিকটে ছন্দাই হাওরে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে দিঘীরপাড় ইউনিয়নের সপরিকান্দা ও পাটুলীর চরসহ বিভিন্ন এলাকার ফসল তলিয়ে গেছে।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে উপজেলার কীর্তনখোলা বাঁধ ভাঙ্গার পর আরও ৯টি ছোট-বড় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। গোটা হাওরাঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলোতে এখন চলছে কান্না-আহাজারি। উপজেলার মেন্দিপুর ও গাজীপুর ইউনিয়নের কৃষকরা জানায়, ধনু নদী দিয়ে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনের মধ্যে মেন্দিপুর ইউনিয়নের নাওটানা, পুটিয়া, পেটনা, কুড়পার এবং গাজীপুর ইউনিয়নের কেওরালা, কুমারিয়া, কেদারিয়া, পুইট্যা এবং খৈল্যার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে মেন্দিপুরের রোয়াইল, ঝালখালি, পুটিয়া, পেটনা এবং গাজীপুরের বুড়বুড়িয়া, বেড়ি ও ফেনার হাওরসহ অন্তত ২০টি ছোট বড় হাওড়ের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বোরো ধান নতুন করে তলিয়ে গেছে।
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নদীর পানি বিভিন্ন হাওর-বিলে ঢুকে পড়ায় নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার কান্দিউড়া, নওপাড়া, বলাইশিমুল ও মোজাফরপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোর কৃষকদের চোখে এখন ফসল রক্ষার চিন্তায় ঘুম নেই। উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে চরম আশংকায় রয়েছেন এবং যে সব জমিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে সেসব জমির আধাপাকা বোরো ধান কেটে ফেলছেন কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলার বিস্তীর্ণ হাওর এলাকাসহ ৬টি উপজেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৫ হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মতে পানিতে নিমজ্জিত ধানি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২২১ কোটি টাকা।
কৃপ্র/এম ইসলাম