কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার হাওড় একের পর এক পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। রবিবার পর্যন্ত জেলার প্রায় ৩০ হাওড়ের ফসল ডুবে প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ সঠিক সময়ে নির্মিত না হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। এখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় রাতদিন প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাওড়বাসী, জেলা প্রশাসন। জনরোষে ঠিকাদার, পিআইসি, পাউবো বাঁধ এলকায় যেতে পারছে না। এদিকে দেখার হাওড়ের টলাখালী বাঁধের কাজে নিয়োজিত বিএডিসির ঠিকাদার মিথ্যা অভিযোগ এনে বাঁধ এলাকার মানুষকে আসামি করে থানায় অভিযোগ করলে বিক্ষুব্ধ জনতা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে।
জানা যায়, পাউবোর বাঁধ ভেঙ্গে, বাঁধ উপচে এবং পাহাড়ী ঢল ও বর্ষণে সরকারী হিসেবে ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি বিভাগের হিসাবে শনিবার দিরাই উপজেলার চাপতি ও বরাম হাওড়, পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওগের শালিকা, ডোমাখালী ও মাছুয়াখালী বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়টি তলিয়ে গেছে। কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের মতে, গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকা।
সদর উপজেলার দেখার হাওড়ের টলাখালী বাঁধে বিএডিসির অসম্পূর্ণ সøুইসগেটে কাজ না করে হাওড়ে ফসলের ক্ষতি করে এবং ঠিকাদারের মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে কৃষকরা। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ঠিকাদারের পক্ষাবলম্বন করে এক লন্ডন প্রবাসী উত্তেজিত গ্রামবাসীকে গালমন্দ করায় তাকে গণপিটুনি দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সদর থানার ওসি সহিদুল্লাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেবেন না বলে আশ্বস্ত করলে অবরোধ প্রত্যাহার করে জনতা। জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৩০টি হাওড় ইতোমধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণ এখনও না থামায় আরও ফসলহানির আশঙ্কায় রয়েছে কৃষক ও সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে টানের (উপরের) বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। গত রাতে শিলাবৃষ্টিও ভয়াবহ আকারে ক্ষতি করেছে এসব ধানী জমির ফসল।
এদিকে রবিবার দুপুরে জেলার সর্ববৃহৎ দেখার হওড়ের উতারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে ৯ হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র জানিয়েছে। দেখার হাওড়ের টলাখালী বাঁধে ঠিকাদার বাঁধ এলাকার মানুষকে আসামি করে থানায় অভিযোগ করলে নিলপুর, গোবিন্দপুর এলাকার মানুষ এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাহেদুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। হাওড়ে পানির চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তিন হাজার কোটি টাকার ফসলই এবার নষ্ট হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, পাহাড়ী ঢলে ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও ঠিকাদারদের গাফিলতির কথা স্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ/ কৃপ্র/এম ইসলাম