‘ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানে পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চৈত্র এবার তার স্বভাবজাত চরিত্র হারিয়ে বৈশাখের আগেই সিলেট অঞ্চলে নিয়ে আসে ঝড়-ঝঞ্জা, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল। গ্রাস করেছে সিলেট বিভাগের অন্তত ৪০ টি হাওরেরর কাঁচা ধান। সিলেটের চার জেলার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর চাষকৃত বোরো জমির মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান এখন পানির নিচে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানান, হাওরে পানি কমলেও এই ধান আর কাজে লাগবে না। কারণ বেশির ভাগ ধান ‘দুধ’ অবস্থায ডুবে গেছে। এই অবস্থায় বেড়েছে চালের দাম।
৮ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রোদ উঠলেও আকাশে মেঘের আনাগোনা ক্ষতিগ্রস্তদের শংকা দূর হয়নি।এদিকে, এবার হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। বিভিন্ন স্থানে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ফুঁসে উঠছেন। তারা এ ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করেছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন গত বুধবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের অধিকাংশ হাওর তলিয়ে যাওয়া, বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে নানা অনিয়ম এবং কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তিনি মন্ত্রীকে সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থা বিবেচনা করে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও কৃষিঋণ মওকুফ, নতুন করে কৃষিঋণ প্রদান ও দ্রুত কৃষকদেরকে খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য সাহায্য দেয়ার অনুরোধ জানান।
এদিকে সুনামগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলু সহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পৃথক সভায় সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেছেন। তরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কর্মসুচী চালু রাখারও দাবি জানান।
সুনামগঞ্জে ৯১ হাজার কার্ডের স্থলে ২ লাখ কার্ড প্রদানের জন্য ও ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রয় কর্মসূচি আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম । ‘চোখের সামনে এতোগুলো ধান চলে গেল, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি-’ মন্তব্য করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এলাকাবাসীকে নিয়ে অবশিষ্ট হাওর রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও যদি শেষ রক্ষা হয়।’ জেলার সকল মিলার ও চাল ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে- যাতে কেউ চালের দাম বৃদ্ধি না করে। জেলা প্রশাসক জানান যারা ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কারচুপি অনিয়ম করেছে তাদেরকে বিচারের আওয়তায় আনা হবে।
জামালগঞ্জের হালির হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল ডুবির ঘটনায় গত মঙ্গলবার কয়েক হাজার কৃষক পাউবো, পিআইসি ও সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের শাস্তির দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে । পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে বলা হয়-ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারদের অবহেলা, দুর্নীতির দরুণ জামালগঞ্জ উপজেলার দেড়শত কোটি টাকার ফসল ডুবে গেছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম