কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নিম এর বৈজ্ঞানিক নাম AZADIRACHTA INDICA নিম একটি ঔষধি গাছ নিমের উৎপত্তি ভারত এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাতে। আমাদের দেশে জুন মাস থেকে নিমের বীজ বপন শুরু হয়। বর্ষকালের শেষ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বীজ নার্সরী বেডে, পলিব্যাগে অথবা সরাসরি জমিতে লাগানো যেতে পারে।
নিমের ডাল, পাতা, রস, সবই কাজে লাগে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কান্ড ২০-৩০ ইঞ্চি ব্যাস হতে পারে। ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে। পাতা কাস্তের মত বাকানো থাকে এবং পাতায় ১০-১৭ টি করে কিনারা খাঁজকাটা পত্রক থাকে। পাতা ২.৫-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। নিম গাছে এক ধরনের ফল হয়। আঙুরের মতো দেখতে এ ফলের একটিই বিচি থাকে।
জুন-জুলাইতে ফল পাকে, ফল তেতো স্বাদের। বাংলাদেশের প্রায় সবত্রই নিম গাছ জন্মে। প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভাল হয়। বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী। নিমের পাতা থেকে আজকাল প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে।
কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকর।নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এ কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এ কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও তৈরি করা হচ্ছে । প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উত্পাদন ও প্রসারকে উত্সাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুত্সাহিত করছে। নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষনা করেছে।
নিমের ঔষধি গুনঃ সারা বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল এখন ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিম অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার চলছে। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে চ্যাগাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে,দন্ত চিকিতসায় ব্যাথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
নিমের ব্যবহারঃ কফজনিত বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এর প্রতিকার হিসাবে ৩০ ফোটা নিম পাতার রশ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী,শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ ঔষধটি নিষেধ।
কৃমি: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেটে বড় হয়। চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়। এ জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়া দিন ৩ বার সামান্য পানি গরমসহ খেতে হবে।
উকুন নাশ: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগান। ঘন্টা খানেক ধরে মাথা ধুয়ে ফেলুন। ২/৩ দিন এভাবে লাগালে উকুন মরে যাবে।
অজীর্ণ: অনেকদিন ধরে পেটে অসুখ। পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস, সিকি কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল- বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে।
খোস পাচড়া: নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড় কামল দিলে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে।
দাতের রোগ: নিমের পাতা ও ছালের গুঁড়া কিংবা নিমের চাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে দাত হবে মজবুত, রক্ষা পাবে রোগ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম: নিম তেলা একটি শক্তিশালী শ্রক্রানুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।
কৃপ্র/ এম ইসলাম