‘অর্ধেকেরও কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সুনামগঞ্জ জেলার চলমান অকাল বন্যায় পানিতে তলিয়ে গেছে গবাদিপশুর চারণক্ষেত্রগুলোও। তার ওপর স্থানীয় বাজারগুলোয় মিলছে না প্রয়োজনীয় গো-খাদ্য। এ অবস্থায় হাওড়াঞ্চলে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে অর্ধেকেরও কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা। সুনামগঞ্জের সবচেয়ে নিচু উপজেলা ধর্মপাশা। প্রতি বছরের মতো এবারো মার্চের শেষ সপ্তাহে অকাল বন্যায় ডুবে গেছে এখানকার হাওড়ের ফসল ও বাড়ির আঙ্গিনা। এ অবস্থায় গবাদিপশু রাখার মতো কোনো জায়গা পাচ্ছেন না উপজেলার কৃষকরা। পুরো উপজেলায় গবাদিপশু বিচরণের মতো কোনো তৃণভূমি অবশিষ্ট নেই। ফলে পশুকে খাওয়ানোর জন্য মিলছে না কোনো ঘাস। এ উপজেলার শানবাড়ি বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, রাখার জায়গা না থাকা ও খাদ্য সংকটের কারণে অসংখ্য গবাদিপশু বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে এসেছেন উপজেলার কৃষকরা। আর এ সুযোগে প্রায় অর্ধেক দামে বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন এসব পশু।
এ উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাসিন্দা তৌফিক মজুমদার বলেন, ‘আমাদের ১৬টি গরু ছিল। এর মধ্যে ১৩টি প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিয়েছি। খাদ্য সংকট ও জায়গার অভাবে বাকি তিনটিও বিক্রি করে দিতে হবে।’ শুধু ধর্মপাশাই নয়, একই অবস্থা জেলার তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলারও। সর্বত্রই তৃণভূমিসহ গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে উপায় না দেখে কম দামেই গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন এসব অঞ্চলের গৃহস্থ ও কৃষকরা।
কয়েকজন কৃষক জানালেন ‘এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বোরোর আবাদ করেছেন। বন্যায় সব তলিয়ে গেছে। এখন নিজেদেরই অন্ন জুটছে না। এ অবস্থায় গরুর খাদ্যের ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে গবাদিপশু বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওড়পাড়ের কৃষক বদরুল মিয়া দুদিন আগে নিজের তিনটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি জানান, বন্যার আগেও যে গরুর দাম ছিল ৮৫ হাজার টাকা, তা তিনি বিক্রি করেছেন ৫৪ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ‘ঋণের টাকা শোধ আর পরিবার চালাতে আমার অন্য উপায় ছিল না। হাওড়ের ধান তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন নৌকা বোঝাই করে গৃহস্থরা তাদের গবাদিপশু বিক্রির জন্য পশুহাটে নিয়ে যাচ্ছেন।’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘হাওড় তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। গরু চড়ানোর কোনো স্থান নেই। তার ওপর ফসল না ওঠায় কৃষকদের সংগ্রহে খড়ও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।’ তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় কৃষকদের এ আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও গোয়ালে আবারো গবাদিপশু পূর্ণ করতে একযুগ লেগে যেতে পারে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহেদুল হক বলেন, ‘পুরো জেলায়ই গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার অভাবের তাড়নায়ও গবাদিপশু বিক্রি করছেন। পানি না কমলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কৃষকদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি।’
কৃপ্র/এম ইসলাম