কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত রসুনের ৩০ ভাগ রসুনই উৎপাদন হয় নাটোর জেলায়।আর চলতি মৌসুমে নাটোরে রসুন উৎপাদন ২ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। জমি থেকে কৃষকদের রসুন সংগ্রহ এখন শেষের পথে। বাড়ির আঙিনায় গায়ের বধূরা ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কাজে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলের ৬৪ জেলায় রসুনের আবাদি জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের ২৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে নাটোর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রসুনচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর। কৃষি বিভাগের প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে এবার রসুনের উৎপাদন হবে অন্তত ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৮ টন। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ফলন ২৫.২৩ মণ। তবে এলাকার রসুন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা যায়, মোট উৎপাদন ২ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যাবে।
বিগত বছরগুলোতে জেলায় রসুনের আবাদি জমির পরিধি ও উৎপাদন উভয়ই ক্রমশঃ বেড়েছে। ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করে ফলন পাওয়া গিয়েছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪৩৮ টন। ২০১৩ সালে ১৭ হাজার ৮৪০ হেক্টর আবাদি জমি থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৪ টন এবং ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩১ টন রসুন পাওয়া গিয়েছিল। গত বছর ২০ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৬ টন ফলন পাওয়া যায়।
নাটোরে উৎপাদিত রসুনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিনা চাষে রসুন উৎপাদন। প্রচলিত পদ্ধতিতে জমি চাষ করে রসুন লাগানো হয়। নাটোরে রসুনের আবাদি জমির প্রায় ৮০ ভাগই বিনা চাষের রসুন। ১৯৯৪-৯৫ সালে জেলার সীমান্তবর্তী বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষকরা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে রসুনের কোয়া বুনে বিনা চাষে রসুন উৎপাদনের প্রচলন করেন। এই পদ্ধতিতে রসুন আবাদে জমি চাষ করতে হয় না, সেচও লাগেনা। আগাছা থাকে কম এবং সারের ব্যবহার খুবই কম। উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনের পরিমাণ বেশী হওয়ায় এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রসার ঘটে জেলার অন্যসব উপজেলা ছাড়িয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতে।
নাটোরের বেশিরভাগ রসুন উৎপাদিত হয় গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলায়। জমি থেকে রসুন সংগ্রহ প্রায় শেষ হয়েছে বলা চলে। তবে জমি থেকে রসুন সংগ্রহের ব্যস্ততা এখন কৃষকদের বাড়ির আঙিনায়। সফলতা ও সমৃদ্ধির সুখ স্বপ্নে বিভোর গ্রামের বধূরা এখন রসুন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বড়াইগ্রাম উপজেলার তিরাইল গ্রামের রসুন চাষি তোফাজ্জল হোসেন চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় রসুন বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়েছিল। পরে আগাম ঝড়-বৃষ্টির শংকার মাঝেও বিঘাপ্রতি ৩০ মণ ফলন পেয়েছেন তিনি। এই ফলনেও অসন্তুষ্ট তোফাজ্জ্বল গত বছর বিঘাপতি ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়েছিল বলে জানান। আহমদপুর এলাকার রুহুল আমিন বিঘায় ফলন পেয়েছেন ৩২ মণ। গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলি গ্রামের খলিলুর রহমানের বিঘায় ফলন ২৭ মণ। তবে কিছু কৃষক জানান, গড়ে তারা ২০ মণ করে ফলন পেয়েছেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার ইকবাল আহমেদ রসুনের গড় ফলনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে রসুনের উৎপাদন কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, একই জমিতে বার বার রসুন চাষ এবং মাটিতে জৈব সারের ঘাটতির কারণে ক্ষেত্র বিশেষে এমন হতে পারে। গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষি অফিসার আব্দুল করিম জানান, শুধু বিনা হালে রসুন চাষই নয়, রসুনের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গী চাষের উদ্ভাবনও এই এলাকা থেকেই হয়েছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম