কৃষি প্রতিক্ষন সিলেট : ফেঞ্চুগঞ্জে নবনির্মিত শাহজালাল সার কারখানায় উৎপাদন ৩য় বারের মত বন্ধ হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্যাসের সাব-স্টেশন থেকে আগুন লেগে এ বিপত্তি ঘটে। এর পর থেকেই বন্ধ রয়েছে কারখানাটির উৎপাদন। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে । কারখানাটি পুর্ণাঙ্গ উৎপাদন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে । গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শাহজালাল সার কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। মোট ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কারখানাটি চলতি বছরের শুরুতে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রথম থেকেই ঘটে চলা নানা বিপত্তিতে এখনো তা সম্ভব হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে শুরুর পর তিনবার কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কারখানাটির উৎপাদন। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্যাসের সাব-স্টেশনে বিস্ফোরণে শাহজালাল সার কারখানায় আগুন লাগে। পরে ফেঞ্চুগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বন্ধ রয়েছে কারখানাটির উৎপাদন। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় স্থানীয় বশির মিয়া কলোনির বাসিন্দা সমরু মিয়ার ছেলে মনির আলী (৩০), মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে হেলাল মিয়া (২৫), মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে সফিক মিয়া (২৫) আহত হন। কারখানার পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তারা আহত হন।
শাহজালাল সার কারখানার প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন জালালাবাদ গ্যাসের অস্থায়ী সিএমএসে (কাস্টমার মিটারিং স্টেশনে) আগুনের সূত্রপাত হয়। সার কারখানার কনডেনসেট অয়েল ওভারফ্লো হয়ে তেল ড্রেনে পড়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ তেল থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির সব ছোট-বড় মেশিন। তবে কারখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারজীছ আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ পথচারী মনির আলী বাদী হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, শাহজালাল সার কারখানার কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে এ দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। অথচ আহতদের দেখতে কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ হাসপাতালে যাননি। এমনকি কোনো খোঁজখবরও নেননি। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা ঘটনাটি তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস ছালেক।
এ বিষয়ে জানতে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জারজীছ আলীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য ২০১২ সালের শুরুতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ১৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার। এর আগে কারখানাটি নির্মাণে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকায় একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা সরকার ও দেশটির এক্সিম ব্যাংক প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ (৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা) ঋণসহায়তা প্রদান করে। ২০ বছরে পরিশোধযোগ্য এ ঋণের বার্ষিক সুদহার ২ শতাংশ ধরা হয়। প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। কারখানাটির প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডস।
পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে কারখানাটি প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম। এ হিসাবে বছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন ইউরিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির। এছাড়া দৈনিক এক হাজার টন হিসাবে বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির।
শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ৩৮ মাস। গত বছরের আগস্টে এর মেয়াদ শেষ হয়। এর পর সেপ্টেম্বরে শুরু হয় পরীক্ষামূলক উৎপাদন। কথা ছিল, ২০১৫ সালেই কারখানাটি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাবে। কিন্তু ওই বছরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একবার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে চলতি বছরের শুরুতে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটিসহ আরো নানা জটিলতায় তা আবারো পিছিয়ে যায়। এর পর গত মার্চে অ্যামোনিয়া সরবরাহের পাইপ বন্ধ হয়ে গেলে আবারো বন্ধ হয় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আবারো উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় পূর্ণাঙ্গভাবে কারখানাটি চালুর বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই উৎপাদন চালু হবে।