কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আবুল কালাম আজাদ বাদল ১৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, এরপর ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান। ব্যবসা-বাণিজ্য, জমানো অর্থ বলতে তেমন কিছু নেই। আপাদমস্তক এই বাম রাজনীতিবিদের সম্পদ বলতে স্থানীয় মানুষের ভালবাসা এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কয়েক একর জমি। পৈত্রিক ভিটায় একটি পুরনো টিন-কাঠের ঘর একেবারে বসবাসের অনুপযোগী। বহু বছর ধরে ভাড়ায় বসবাস করেন বরিশাল নগরীতে। দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষারত, ছোট ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্নাতকোত্তর পাশ সহধর্মিনী গৃহীনি। সংসারের ব্যয়, ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ, এলাকার মানুষকে সাহায্য-সহায়তা, নিজের চলার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হতো তাকে।
আর্থিক দৈনতার কারণে নিজের জমিতে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল। ঘনিষ্ঠদের পরামর্শে বছরের এই সময়টিতে পতিত থাকা প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে পরীক্ষামূলক সূর্য্যমুখীর আবাদ করেছেন। দিগন্তজুড়ের সূর্য্যমুখীর হাসির সঙ্গে তার নিজের মুখেও হাসি ফুটেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান শামীম জানান, বাদল ভাইয়ের সূর্য্যমুখী চাষ প্রকল্প এখন এ এলাকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দর্শণাথী ছাড়াও অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এই সাফল্য দেখে প্রসংশা করেছেন। এলাকার অনেকেই আগামীতে সূর্য্যমুখী চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। মহাসড়কের পাশে উজিরপুরের ইচলাদী টোল প্লাজা লাগোয়া বিশাল প্লটে সূর্য্যমুখীর বাগান যেন সৌন্দর্য্যের ডালা সাজিয়ে রেখেছে।
কৃষিবিদ ইসমত জাহান হ্যাপী ও স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ জাহিদ আলম বলেন, সারা দিনই পথচারী, স্থানীয় ও দূরদুরান্তের মানুষ দেখতে আসেন। মোটর সাইকেল আরোহী, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং পিকনিকের বাস থামিয়ে অসংখ্য মানুষকে সূর্য্যমুখীর পেখম ছড়ানো সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেখা যায়। প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক মো. রেজাউল করিম রিয়াজ জানান, এপ্রিলের শেষ দিকে ফুল শুকিয়ে যাবে। তখন শুকিয়ে যাওয়া ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হবে। বীজ কিনতে অনেকে আগে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রকল্পের আরেক কর্মী মো. ফারুক হোসেন বলেন, তিন মাস নীবিড় পরিচর্যার পর ফোঁটা ফুল দেখে দর্শণার্থীরা যখন আনন্দ পায়, তখন তারাও মনে শান্তি পান, পরিশ্রম সার্থক মনে হয়। তবে কোন কোন দর্শণার্থী-পথচারী যখন ফুল ছিঁড়ে নিলে কস্ট লাগে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন তালুকদার বলেন, পরীক্ষামূলক সূর্য্যমুখীর চাষ সফল হয়েছে। এই উদ্দীপনায় উজিরপুরে আগামী মৌসুমে অনাবাদী জমিতে সূর্য্যমুখী চাষে বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
কৃষিবিদ জাকির তালুকদার বলেন, আমন ধান কাটার পর সাধারণত এই সময়ে জমি পতিত থাকতো। পতিত জমিতে আবুল কালাম আজাদ বাদলের সূর্য্যমুখী প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সূর্য্যমুখীর তেল কোলেস্টরেল ফ্রি এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর উৎপাদন বাড়াতে পাড়লে অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/ কৃপ্র/এম ইসলাম