কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যারা নতুন উদ্যোক্তা কোয়েলের খামার করতে চান তাদের অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাখির আবাসন, খাবার, পাখির সুস্থতা ও ভিটামিন সরবরাহ।কোয়েল পাখির আবাসন অবশ্যই খাঁচায় হতে হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন মেঝে পাকা একটি ঘর আছে সেখানে তুষ ঢেলে পাখি ছেড়ে দিলেই তো হলো। প্রতি বর্গফুটে আটটি পাখি ছেড়ে দিলাম। সবাই বলে কোয়েল পাখির কোনো অসুখ নেই। শুধু ডিম পাড়ার জন্য মাদি কিনে আনলেই হলো। এই ধারণা ভুল। পাখি পালনে পানির পাত্র আর খাবারের পাত্র লাগবে। সময়মতো খাবার এবং পানি দিতে হবে। কোয়েল পালনে অল্প বিনিয়োগ অনেক লাভ। অনেকে বলেন, কোয়েল পালনে ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। তবে সেটি সঠিক নিয়মে করতে হবে। লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের অসুবিধা ও খাঁচায় কোয়েল পালনের সুবিধাগুলো জানতে হবে।
কৃমি হলে আপনার পাখি মরবে না কিন্তু ডিম কমে যাবে, ধীরে ধীরে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিছুদিন পর মারা যাবে। আরেকটি সমস্যা হলো পাখির আমাশয়-যেহেতু পাখি সবসময় লিটার বা নিজেদের বিষ্ঠার ওপর থাকবে সেহেতু আমাশয় হবে। ওষুধ খাওয়ালে ভালো হবে কিন্তু ততক্ষণে ডিম কমে যাবে।
চোখ ফুলে যাওয়া-পাখির বিষ্ঠা থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস বের হয় এর ফলে অনেক সময় চোখ ফুলে যায়। বাতাস ঠিকমতো চলাচল করলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ততক্ষণে ডিম কমে যাবে। লিটারে ফাঙ্গাস হতে পারে যা খেলে কোয়েল বাঁচবে না। এ ছাড়া কোয়েল পাখি ওড়ে। উড়তে গিয়ে কখনো ডিমের ওপর গিয়ে পড়ে ফলে ডিম ভেঙে যাবে। আপনি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
পক্ষান্তরে যদি আপনি কোয়েল পাখি খাঁচায় পালন করেন তাহলে কোনো রোগ হবে না বলা যায়, এ ক্ষেত্রে শুধু বার্ডফ্লু দেখা দিলেই পাখি মারা যাবে। তবে খাঁচায়ও কোয়েল মারা যায় তবে সেটা রোগে নয়, খাঁচার নেটের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে/খুঁচিয়ে নেটের ফাঁকে পা আটকে যায় এসব কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাখি মারা যায়। তবে সেটা খুবই নগণ্য। খাঁচায় কোয়েল পাখি পালন করলে ব্যবসা শুরুকালে আপনার বিনিয়োগ বেশি হবে।
ধরুন, ১০০০ পাখি দিয়ে খামার শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। ১০০০ মাদি পাখির দাম আনুমানিক ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা। খাঁচা ২২,০০০ থেকে ২৬,০০০ টাকা। আপনি যদি ৩০ দিনের পাখি ক্রয় করেন তাহলে আপনাকে আরও ৩০ দিনের খাবার জোগান দিতে হবে। সেখানে মনে করুন ২০ কেজি প্রতিদিন খাওয়াতে হবে। প্রতি কেজি লেয়ার খাবার ৩৫ টাকা দরে দৈনিক ২০ গুণ ৩৫ মোট ৭০০ টাকা, সুতরাং ৩০ দিনে খরচ হবে ২১,০০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ যেমন আলোর ব্যবস্থা, বালতি ক্রয় ইত্যাদিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়বাবদ আরও ৫০০০ টাকা। ৬০ দিন পর থেকে বলা যায় আপনি পুরোদমে ডিম পাবেন। তার আগেও পাবেন কিছু কিছু ডিম তবে আনুমানিক ৬০ দিন থেকে সব পাখি ডিম দেবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পাখির ঘর বা খাঁচা স্থাপন করতে হবে উঁচু স্থানে। খাঁচার চাউনি এবং চারপাশে নেট যাতে বাতাস চলাচল কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।
এবার আসা যাক পাখির খাবার বিষয়ে। যদি পাখিকে নিম্নমানের খাবার খাওয়ান তাহলে খাঁচায় পালন করলেও কোয়েলের আমাশয় বা পেটে সমস্যা দেখা দেবে। ভ্যাকসিন দিলে হয়তো সুস্থ হবে কিন্তু ততক্ষণে পাখির ডিম কমে যাবে। তাই খাবার ক্রয়ে যাচাই-বাছাই ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কোয়েল পালনে পাখির সুস্থতার প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। পাখি যদি অসুস্থ থাকে তাহলে পাখি সাধারণত ডিম পাড়ে না।
লিটারে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই খাঁচায় পালন করা ভালো। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে মুরগির বা হাঁসের জন্য ডাক্তার আছে কিন্তু কোয়েলের জন্য বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার নেই। ফলে সব ডাক্তাররা কোয়েলকে মুরগির চিকিৎসা দেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। কোয়েলের ঘরে অহেতুক লোকজন চলাফেরা করলে ডিম পাড়ার পরিবেশ নষ্ট হয় ফলে ডিম পাড়ার হার কমে যায়। যেহেতু কোয়েল প্রায় প্রতিদিন এবং কোয়েলের ওজন অনুপাতে অনেক বড় ডিম পাড়ে সেহেতু তার শরীরে প্রচুর প্রোটিনের প্রয়োজন। এজন্য নিয়মিত প্রোটিন ও ভিটামিন খাওয়াতে হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম